টনসিলাইটিস চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি
জিহ্বার শেষপ্রান্তে, আলজিহ্বার নিচে বাম ও ডান পার্শে বাদামের মত ১.৫ সেন্টিমিটারের মত আকারে লালবর্ণের মাংশপিন্ডকে টনসিল বলা হয়ে থাকে। টনসিল দেখতে মাংশপিন্ডের মত মনে হলেও এটি লসিকা কলা ও লিস্ফয়েড টিস্যু দিয়ে তৈরি। মুখগহ্বরের দুপাশে দুইটি টনসিলের অবস্থান। মুখ, গলা, নাক কিংবা সাইনাস হয়ে রোগজীবানু অন্ত্রে বা পেটে ঢুকতে বাধা দেয় এই টনসিল অর্থাৎ টনসিল শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করে।
টনসিল বা টনসিলদ্বয়ের প্রদাহ হলে তাকে টনসিলাইটিস বলা হয়। আর টনসিলাইটিস হচ্ছে টনসিলসমূহ যখন ব্যকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের সংক্রমন দ্বারা আক্রন্ত হয়ে প্রদাহের বা ইনফেকশনের সৃষ্টি করে ভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। টনসিল প্রদাহ বেশির ভাগ বর্ষায় হয় এবং ৮৫% ভাইরাস সংক্রমনে হয়।
টনসিলাইটিসের প্রকারভেদ ঃ-
প্যাথলজীক্যাল ভাবে টনসিলাইটিস তিন প্রকার। যথাঃ-
১। একিউট ক্যাটারাল টনসিলাইটিস।
২। ফলিকুলার টনসিলাইটিস্।
৩। ঘাপোরেটিভ বা কুইনসি টনসিলাইটিস।
টনসিলাইটিসের কারণ ঃ ১) প্রধান কারণ ঃ- * সোরা * সিফিলিস * সাইকোসিস * টিউবারকুলার ডায়াথেসিস * রিউমেটিক ডায়াথেসিস।
২) আনুষাঙ্গিক কারণ ঃ-
* ১২ বৎসর বয়সের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে।
* ট্রক্সিক প্যাস গ্রহনের কারণে।
* বংশগত কারণে।
* ঠান্ডা বা ঠান্ডাজনিত পরিবেশের কারণে।
* বিভিন্ন রোগের জটিলতার কারণে। যেমন-ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডিপথেরিয়া।
* বিভিন্ন অর্গানিজমের ইনফেকশনের কারণে। যথা- ষ্টেপটোকক্কাই স্ট্যাফাইলোকক্কাই, নিউমোকক্কাই।
* আমেরিকান একাডেমি ও ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান (AAFP)-এর মতে, আনুমানিক ১৫-৩০ শতাংশ টনসিলাইটিসের কারণ হল ব্যকটেরিয়া। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ষ্ট্রেপটোকক্কাস (Streptococcus) বা ষ্টেপ (Strep) ব্যাকটেরিয়ার করণে হয়।
অন্যান্য কারণ হল-
* এডিনোভাইরাস (Adenoviruses).
* ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (Influenza Virus).
* এপষ্টাইন বার ভাইরাস (Epstein-Barr Virus).
* প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (Parainfluenza Viruses)
* এন্টিরো ভাইরাস (Enteroviruses)
* হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস (Herpes Simplex Virus)
টনসিলাইটিস এর লক্ষণ ঃ-
* গলায় ব্যথা ও ঘা হয়।
* ময়লাযুক্ত জিহ্বা।
* শীত শীত ভাব।
* জ্বর ওঠা নামা করতে পারে।
* টনসিল লাল দেখা যায়।
* টনসিল বড় হয়ে যাবে এবং ফোলে ওঠবে।
* টনসিল ষ্পর্শকাতর থাকবে।
* টনসিল ফোলা ও ব্যথা থাকবে।
* খাবার খাইতে বা কথা বলতে গলায় ব্যথা হয়।
* গলার স্বর পরিবর্তন হবে নাকে কথা বাজবে।
* কানে ব্যথা হবে।
* নাক দিয়ে চিকন স্বরে কথা বলবে।
* মাথা ধরা, শরীর ব্যথা অস্থিরতা থাকে।
* গলধঃকরন কষ্টকর বা বেদনাদায়ক।
* নিঃশ্বাসে দুগর্ন্ধ।
* শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
* ঘাড় শক্ত।
* চোয়াল ও ঘারের লিষ্ফনোড ফোলে যায়।
* টনসিলে সাদা ও হলুদ দাগ আছে।
* বেদনাদায়ক ফোস্কা বা গলায় আলসার।
* ক্ষুদামান্দ্য।
* বমি বমি ভাব বা বমি হয়।
* পেটে ব্যথা।
রোগানুসন্ধান (Investigation)ঃ-
* খালি চোখে সহজেই আমরা টনসিলাইটিস নির্ণয় করতে পারি।
* সাহায্যকারী যন্ত্র হিসাবে মিনি টর্চ এবং টাং (Tounge) ডিপ্রেসরের সাহায্যে সহজেই টনসিলাইটিস নির্ণয় করা যায়।
* Throat swab- পরীক্ষা করলে টনসিলাইটিস এর জীবানু পাওয়া যায়।
জটিলতা (Complecation)ঃ-
* প্যারাফ্যারিনজিয়াল এবসেস।
* রিট্রো ফ্যারিনজিয়াল এ্যাবসেস।
* ল্যারিনজিয়াল ইডিমা।
* পেরিটনসিলার এবসেস।
* রিউমেটিক ফিভার।
* নেফ্রাইটিস।
* সেপটিখেমিয়া।
ভাবীফল (Prognosis)
* কনজারভেটিব চিকিৎসা করলে বেশিরভাগ রোগী আরোগ্য সম্ভব। তবে চিকিৎসা বিলম্বিত হলে টনসিলাইটিসের ভাবীফল অনেক ক্ষেত্রে মারাত্মক আকার ধারন করে থাকে। অনেক সময় খাদ্য নালী আক্রান্ত হয়ে রোগীর অবস্থা সংকটময় করে তোলে। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করিলে আরোগ্য সম্ভব।
প্রতিরোধ (Prevention) ঃ-
ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জীবানুর কারণে টনসিল সংক্রামক হয়। অতএব, ভালভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে উত্তম প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে।
* যাদের সংক্রামন আছে তাদের থেকে দূরে থাকুন।
* হাঁচি, কাশির সংস্পর্শে আসার পর হাত ধুয়ে নিন।
* সাধারন টয়লেট ব্যবহারের পর এবং খাওয়ার আগে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এবং ঘন ঘন হাত ধুতে হবে।
* খাবার, পানির গ্লাস, পানির বোতল অথবা তৈজসপত্র শেয়ার এড়িয়ে চলুন।
* টনসিল রোগনির্ণয় করার পর ট্রুথব্রাশ রিপ্লেশ করা।
ব্যবস্থা (Managementঃ) ঃ-
ঔষধ (Medicine) ঃ- লক্ষণসদৃশ নিম্নলিখিত হোমিওপ্যাথি ঔষধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হরে। যেমন-একোনাইট নেপিলাস, বেলেডোনা, মার্কস-সল, কাইটোলক্কা ব্রায়েনিয়া এলবা, এপিস মেল, হিফার সালফা ও ক্যালকেরিয়া কার্ব ইত্যাদি।
উপদেশ (Advice) ঃ-
১। করনীয় ঃ-
* গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করতে হবে।
* তরল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
* আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পরিধান করতে হবে।
* আবাসস্থল স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে।
২) নিষেধ ঃ-
* ধুমপান ও মদ্যপান বিষেধ।
* স্যাঁত স্যাঁত স্থানে সববাস এবং হাঁটাচলা।
* গুরুপাক এবং মসলাযুক্ত খাবার।
* শক্ত খাদ্য।
* ঠান্ডা খাবার।
৩) পথ্য (Diet) ঃ-
* তরল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
* হালকা গরম খাবার খেতে হবে।
* মৃদু গরম পানি ও মৃদু গরম দুধ দিতে হবে।
সুত্রঃ- ডাঃ এ আর খান