logo

HOMOEOPATHY DOCTOR

📚 Home

অগ্রসর কর্মী মানয়োন্নয়ন গাইড

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য দরস, বই নোট, বিষয়ভিত্তিক আয়াত-হাদিস ও মাসয়ালা সংকলন

📚 অনুশীলনী -২১(নভেম্বর ১ম ক্লাস)

# দারস তৈরী - আল-ইখলাস # বই নোট: পলাশী থেকে বাংলাদেশ # পরামর্শ সংক্রান্ত আয়াত মুখস্ত # পরামর্শ সংক্রান্ত হাদিস মুখস্ত#সাদাকা সংক্রান্ত সম্পর্কিত মাসায়েল

দারস তৈরী - আল-ইখলাস

আরবি, উচ্চারণ ও অর্থ:

আরবি উচ্চারণ অর্থ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحمٰنِ الرَّحِيْمِ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পরম করুনাময়, মেহেরবান আল্লাহর নামে।
١. قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ বলুন, তিনিই আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়।
٢. اللَّهُ الصَّمَدُ আল্লাহুস্‌ সামাদ আল্লাহ অমুখাপেক্ষী (তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী)।
٣. لَمْ يَلِد وَلَم يولَدْ লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ তাঁর কোনো সন্তান নেই এবং তিনি কারো সন্তান নন।
٤. وَلَمْ يَكُن لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।

নাম: আল-ইখলাস (একনিষ্ঠতা)।
সূরা: ১১২।
অবতীর্ণ: মক্কায়, কুরাইশদের এক প্রশ্নের জবাবে।

সূরার নামকরণ: পবিত্র কুরআনুল কারীমের মাত্র দুটি সূরা যে সূরা দুটির নামকরণ সূরায় উল্লিখিত শব্দ বা সূরায় বর্ণিত ঘটনা থেকে করা হয়নি। বরং নামকরণ করা হয়েছে সূরার মুখ্য উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। একটি হলো সূরা ফাতিহা আর দ্বিতীয়টি হলো সূরা ইখলাস। অত্র সূরায় একজন সত্যিকার মা‘বূদের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।
الإخلَاص শব্দের অর্থ : একনিষ্ঠভাবে কোন কিছু করা। যেমন বলা হয় : أخلص لله عمله সে একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহ তা‘আলার জন্যই তার আমলকে সম্পাদন করেছে। সূরাতে যেহেতু আল্লাহ তা‘আলার পরিচয় ও তাওহীদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে তাই إخلَاص নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
সূরাটির ফযীলত: সূরাটি আকারে ছোট হলেও ফযীলতের দিক দিয়ে অনেক বড়। আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর সাহাবীদের বললেন : তোমাদের কেউ কি রাতে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করতে অপারগ হবে? এটা তাদের জন্য কষ্ট কর হয়ে গেল। তারা বলল : হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাঃ)! আমাদের কে এরূপ করতে সক্ষম হবে? তখন রাসূল (সাঃ) বললেন : (قُلْ هُوَ اللّٰهُ أَحَدٌ) সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য। (সহীহ বুখারী হা. ৫০১৫) অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়লে যে নেকী হবে সেই নেকী এ সূরা পাঠ করলে পাওয়া যাবে। এভাবে এ সূরাটি তিনবার পড়লে সম্পূর্ণ কুরআন পড়ার নেকী পাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ। কারণ পবিত্র কুরআনে মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। তাওহীদ, আহকাম ও নসীহত।
সূরা ইখলাসে তাওহীদ পূর্ণভাবে থাকার কারণে তা কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য, এ ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। (ইবনু কাসীর) আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত নাবী (সাঃ) এক সাহাবীকে একদল বাহিনীর নেতা বানিয়ে প্রেরণ করলেন। সেই লোক বাহিনীর ইমামতি করে যখন সালাত আদায় করতেন তখন প্রত্যেক রাকাতেই সূরা ইখলাস দ্বারা কেরাত শেষ করতেন। সবাই যখন ফিরে আসল এবং নাবী (সাঃ)-কে বিষয়টি বলল তখন নাবী (সাঃ) বললেন : তাকে জিজ্ঞাসা কর কেন সে এরূপ করেছে? তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জবাবে বললেন : আমি এ সূরা পড়তে ভালবাসি। কেননা এতে দয়াময় আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলি রয়েছে। নাবী (সাঃ) বললেন : তাকে বলে দাও আল্লাহ তা‘আলা তাকে ভালবাসেন। (সহীহ বুখারী হা. ৭৩৭৫)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট আগমন করলেন এবং বললেন : আমি এ সূরাকে ভালবাসি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : এ সূরাকে ভালবাসার কারণে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (আহমাদ ৩/১৪১, সনদ সহীহ।)

আব্দুল্লাহ বিন বুরাইদাহ (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে মাসজিদে প্রবেশ করেন। এমন সময় এক ব্যক্তি সালাত আদায় করছিল আর দু‘আ করে বলছিল। اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللّٰهُ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কামনা করছি ঐ বাক্যসমূহের মাধ্যমে যে, নিশ্চয়ই আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমিই আল্লাহ। তুমি ছাড়া সত্যিকার কোন ইলাহ নেই। তুমি একক, অমুখাপেক্ষী, যিনি কাউকে জন্ম দেননি, তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি এবং তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।” রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : ঐ সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! এ ব্যক্তি ইসমে আযমের দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার কাছে চেয়েছে। এ নামে চাইলে তিনি দেন আর এ নামে ডাকলে তিনি ডাকে সাড়া দেন। (আবূ দাঊদ হা. ১৪৯৪, তিরমিযী হা. ৩৪৭৫, ইবনু মাযাহ হা. ৩৮৫৮, সনদ সহীহ)

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (সাঃ) প্রত্যেক রাতে যখন বিছানায় যেতেন তখন দু হাত একত্রিত করে ফুঁ দিতেন, অতঃপর সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করতেন। তারপর যথাসম্ভব দু হাত দিয়ে শরীর মাসাহ করতেন। তিনি প্রথমে মাথা, মুখমন্ডল ও শরীরের সম্মুখ ভাগ থেকে শুরু করতেন। (সহীহ বুখারী হা. ৫০১৭)

শানে নুযূল: জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : এক গ্রাম্য ব্যক্তি নাবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বলল : তোমার রবের বংশ তালিকা বর্ণনা কর। তখন এ সূরা অবতীর্ণ হয়। (বায়হাকী ৭/১৪৬, হাসান।) উবাই বিন কাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, মুশরিকরা নাবী (সাঃ)-কে বলল : হে মুহাম্মাদ তোমার রবের বংশ তালিকা বর্ণনা কর। তখন এ সূরাটি অবতীর্ণ হয়। প্রত্যেক জিনিস যা জন্ম নেয় তা অবশ্যই মারা যাবে এবং যে জিনিস মারা যাবে পরবর্তী বংশধর তার ওয়ারিশ হবে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা মারা যাবেন না এবং তাঁর ওয়ারিশও কেউ হবে না।

সুরাটির বিশেষত্ব:

  • তাওহিদের উপর জোর: এই সূরাটি আল্লাহর একত্ববাদকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।
  • আল্লাহর পরিচয়: এটি আল্লাহর পরিচয়কে সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরে।
  • ফজিলত: এই সূরা একবার তেলাওয়াত করলে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যায় বলে হাদিসে উল্লেখ আছে।

তাফসীর: একজন সত্যিকার মা‘বূদের চারটি বৈশিষ্ট্য এ সূরাতে আলোচনা করা হয়েছে। এ চারটি বৈশিষ্ট্য যে মা‘বূদের মাঝে পাওয়া যাবে তিনিই একমাত্র যাবতীয় ইবাদত পাওয়ার হকদার। এ চারটি বৈশিষ্ট্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো বা কোন কিছুর মাঝে পাওয়া যায় না। তাই সব বাতিল মা‘বূদ বাদ দিয়ে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা উচিত।

প্রথম বৈশিষ্ট্য: যে মা‘বূদের ইবাদত করা হবে তার প্রথম বৈশিষ্ট্য হবে তিনি একক হবেন তার কোন অংশীদার থাকবে না।
এ বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোন কিছুর নেই। তাই এখানে আল্লাহ তা‘আলা أَحَد শব্দটি ব্যবহার করেছেন যার কোন দ্বিবচন বা বহুবচন হয় না। আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া যার ইবাদত করা হয় সবই মানুষের বানানো ও মস্তিস্কপ্রসূত চিন্তা-চেতনা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِھ۪ٓ اِلَّآ اَسْمَا۬ئً سَمَّیْتُمُوْھَآ اَنْتُمْ وَاٰبَا۬ؤُکُمْ مَّآ اَنْزَلَ اللہُ بِھَا مِنْ سُلْطٰنٍﺚ اِنِ الْحُکْمُ اِلَّا لِلہِﺚ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْٓا اِلَّآ اِیَّاھُﺚ ذٰلِکَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ وَلٰکِنَّ اَکْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْنَ)‏ ‘‘তাঁকে (আল্লাহকে) ছেড়ে তোমরা কেবল কতকগুলো নামের ‘ইবাদত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছ; এগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি। বিধান দেবার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এটাই সঠিক দীন কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়।’’ (সূরা ইউসুফ ১২: ৪০)
এ থেকে আরো পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার শানে উপযোগী নয় এমন নামে তাঁকে অভিহিত করা যাবে না, বরং আল্লাহ তা‘আলাকে একমাত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত নামেই অভিহিত করতে হবে।

দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য: الصَّمَدُ অর্থাৎ যে মা‘বূদের ইবাদত করা হবে তিনি কোন কিছুর মুখাপেক্ষী হবেন না। তিনি কোন খাবার, পানীয় ও নিজ প্রয়োজন পূরণের জন্য অন্যের সহযোগিতা গ্রহণ হতে মুক্ত হবেন। মোট কথা যিনি নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই এ আয়াতের তাফসীরে মুজাহিদসহ অনেক মুফাসসির বলেছেন : الصَّمَدُ সামাদ হলেন তিনি যার মাঝে কোন শূন্যতা নেই। (ইবনু জারীর /২২২) এ বৈশিষ্ট্যটিও একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার রয়েছে, তাই তিনিই একমাত্র ইবাদত পাওয়ার হকদার।

তৃতীয় বৈশিষ্ট্য: (لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ) একজন সত্যিকার মা‘বূদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তিনি কাউকে জন্ম দেন না। অর্থাৎ তার কোন স্ত্রী-সন্তান নেই। এটাও একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন : (بَدِيْعُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ ط أَنّٰي يَكُوْنُ لَه۫ وَلَدٌ وَّلَمْ تَكُنْ لَّه۫ صَاحِبَةٌ ط وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ ج وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ) “তিনি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা, তাঁর সন্তান হবে কিরূপে? অথচ তাঁর তো কোন স্ত্রী নেই। তিনিই তো সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক বস্তু সম্বন্ধে তিনিই সবিশেষ অবহিত।” (সূরা আন‘আম ৬: ১০১) অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন : (وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمٰنُ وَلَدًاﮧﺚ لَقَدْ جِئْتُمْ شَیْئًا اِدًّاﮨﺫ تَکَادُ السَّمٰوٰتُ یَتَفَطَّرْنَ مِنْھُ وَتَنْشَقُّ الْاَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ ھَدًّاﮩﺫ اَنْ دَعَوْا لِلرَّحْمٰنِ وَلَدًاﮪﺆ وَمَا یَنْۭبَغِیْ لِلرَّحْمٰنِ اَنْ یَّتَّخِذَ وَلَدًاﮫﺚ اِنْ کُلُّ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ اِلَّآ اٰتِی الرَّحْمٰنِ عَبْدًاﮬﺚ) “তারা বলে, ‘দয়াময় সন্ত‎ান গ্রহণ করেছেন।’ তোমরা এমন এক বীভৎস বিষয়ের অবতারণা করেছ; যাতে আকাশসমূহ বিদীর্ণ হবে, পৃথিবী খণ্ড-বিখণ্ড হবে ও পর্বতগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পতিত হবে, যেহেতু তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভনীয় নয়! আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের নিকট বান্দারূপে উপস্থিত হবে না।” (সূরা মারইয়াম ১৯: ৮৮-৯৩) মূলত: কথা হচ্ছে যে, একজন সত্যিকার মা‘বূদকে কেউ জন্ম দিতে পারে না এবং বানাতেও পারে না। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন : আদম সন্তান আমাকে অবিশ্বাস করে অথচ এটা তার জন্য সমীচীন নয়। সে আমাকে গালি দেয় অথচ এটাও তার জন্য সমীচীন নয়। আমাকে অবিশ্বাস করার অর্থ হলো সে বলে : আমাকে আল্লাহ তা‘আলা পুনরায় সৃষ্টি করতে পারবেন না। যেমন আমাকে প্রথমবার সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, অথচ দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা প্রথমবার সৃষ্টি করার চেয়ে কি অধিক সহজ নয়? আর আমাকে গালি দেয়ার অর্থ হলো : সে বলে : আমার নাকি সন্তান আছে, অথচ আমি একক, অদ্বিতীয়, অমুখাপেক্ষী, আমার কোন সন্তান নেই , আমাকে কেউ জন্ম দেয়নি এবং আমার সমকক্ষ ও সমতুল্য কেউ নেই। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৭৪, সহীহ মুসলিম হা. ২০৭৮)

চতুর্থ বৈশিষ্ট্য: একজন সত্যিকার মা‘বূদের সত্ত্বা, গুণাবলী ও কাজকর্ম অন্য কোনো কিছুরই সমতুল্য ও সমকক্ষ হবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন : (لَيْسَ كَمِثْلِه۪ شَيْءٌ ج وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ) “কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। (সূরা শুরা ৪২: ১১)

এ চারটি বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তা‘আলার রয়েছে, তাই আল্লাহ তা‘আলা একমাত্র সমস্ত মাখলুকের ইবাদত পাওয়ার যোগ্য; অন্য কোন মূর্তি, দেব-দেবী
ইত্যাদি নয়।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

  • ১. সূরার ফযীলত অনেক। যেমন : নেকীর দিক দিয়ে এ সূরা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।
  • ২. যারা প্রকৃতপক্ষে এ সূরাকে ভালবেসে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে ও তাঁর ওপর ভরসা রাখবে আল্লাহ তা‘আলাও তাঁকে ভালবেসে জান্নাত দেবেন।
  • ৩. একজন সত্যিকার মা‘বূদের চারটি বৈশিষ্ট্য যা অত্র সূরায় উল্লেখিত হয়েছে। আর আল্লাহ তা‘আলাই সকল ইবাদত পাওয়ার যোগ্য। কারণ উপরোক্ত
    চারটি বৈশিষ্ট্য কেবল তাঁর মাঝেই আছে।

source: Khurshid420 Blog , Google

🔼


বই নোটঃ পলাশী থেকে বাংলাদেশ

লেখক: অধ্যাপক গোলাম আযম

পলাশী থেকে বাংলাদেশ

"পলাশী থেকে বাংলাদেশ" হলো অধ্যাপক গোলাম আযমের লেখা একটি বই, যা **১৯০ বছর ধরে ব্রিটিশ শাসনের পটভূমি, পাকিস্তান আমলের কুশাসন, এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন** সম্পর্কে আলোচনা করে। এই বইটিতে **১৯৭১ সালে জামায়াতের রাজনৈতিক ভূমিকা** বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

লেখক: অধ্যাপক গোলাম আযম

বিষয়বস্তু:

  • পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে ব্রিটিশ আমলের শাসনের প্রেক্ষাপট।
  • পাকিস্তান আমলের কুশাসন এবং পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা।
  • বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভূমিকা।

অন্যান্য তথ্য:

  • **১৯৮৮ সালের এপ্রিলে** এই পুস্তিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
  • ( ব্রেকেটে- সম্পাদনাকারীর মতামত)

বইটিতে **১০ টি অধ্যায়** রয়েছে।

★ অধ্যায় ০১ : ইংরেজ রাজত্বঃ

  • **পলাশী থেকে বাংলাদেশ**
  • উপমহাদেশে ইংরেজ রাজত্ব: ১৮৫৭ সালে দিল্লীর শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ইংরেজ রাজত্ব গোটা ভারত উপমহাদেশে মযবুত করা হলো। এবাবে উপমহাদেশে বৃটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করতে একশ’ বছর লেগে গেল। এভাবেই ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে পরাধীনতার যে বীজ বপন করা হয়েছিল, তা **একশ’ বছরে বিরাট মহীরুহে পরিণত হলো।**
  • বাংলাদেশে ইংরেজ রাজত্ব: বাংলাদেশ থেকে ইংরেজ রাজত্ব শুরু হওয়ায় বাংগালী মুসলমানরা প্রায় **দু’শ’ বছর ইংরেজের গোলামী** করতে বাধ্য হয়। ইংরেজর মুসলিম দমন নীতির ফলে বাংগালী মুসলমানরা দু’ধরনের গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ছাড়াও অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে এদেশেরই ঐ সব অমুসলিমের পদানত হতে বাধ্য হলো যারা ইত:পূর্বে মুসলমানদের প্রাধান্য মেনে চলত। অমুসলিম জমিদারদের অত্যাচারের ও সুদে টাকা লগ্নিকারীদের শোষণে মুসলমানদের যে কী দুর্দশা হয়েছিল। সে কথা একালের মুসলমানরা ধারণা করতেও অক্ষম।

★ অধ্যায় ০২ : স্বাধীনতা আন্দোলন:

  • ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে বৃটিশ সরকার যখন কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভা কায়েম করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে স্বায়ত্ব শাসনের নামে আংশিক ক্ষমতা তুলে দেবার ব্যবস্থা করল, তখন মুসলমারা **পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা** আদায় করে কিছুটা আত্মরক্ষার বন্দোবস্ত করল। মুসলিম জনগণের প্রতিনিধি যাতে শুধু মুসলিমদের ভোটে নির্বাচিত হতে পারে, সে ব্যবস্থার নামই পৃথক নির্বাচন। যুক্ত নির্বাচন ব্যবস্তায় মুসলিম ও অমুসলিমদের মিলিত ভোটে নির্বাচন হলে কংগ্রেসের অমুসলিম নেতাদের মরযী অনুযায়ী কিছু সংখ্যক মুসলিম আইনসভায় নির্বাচিত হলেও জাতি হিসাবে মুসলিমদের কোন পৃথক সত্তা থাকবে না আশংকা করেই মুসলমনার পৃথক নির্বাচন দাবি করেছিল।

★ অধ্যায় ০৩ : পাকিস্তান আন্দোলন ও ইসলামঃ

  • **পাকিস্তান আন্দোলন ও ইসলাম** : পাকিস্তানের অর্থ কী লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এ শ্লোগানই মুসলমানদের এ আন্দোলনে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। কিন্তু অত্যন্ত দু:খের বিষয় যে, পাকিস্তান আন্দোলন ইসলামের নামে চলা সত্ত্বেও তা **ইসলামী আন্দোলন হিসাবে গড়ে ওঠেনি।** পাকিস্তান কায়েম হবার পর স্বাধীন মুসলিম দেশটিতে ইসলামী আইন, ইসলামী শিক্ষা, ইসলামী অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থা চালু করার কোন পরিকল্পনাই আন্দোলনের নেতারা করেননি। এর ফল যা হবার তাই হয়েছে।
  • আইয়ুব খানের যুগ: আইয়ুব খান জামায়াতে ইসলামীর উপর সবচেয়ে বেশি ক্ষেপা ছিলেন। কারণ জামায়াত গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবার সাথে সাথে আইয়ুব খাঁর ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবাদ করতো। তাই ১৯৬২ সালে সামরিক শাসন প্রত্যাহারের পর গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলাকালে **১৯৬৪ সালের জানুয়ারি মাসে একমাত্র জামায়াতে ইসলামীকেই বেআইণী ঘোষণা করা হয়** এবং ৬০ জন জামায়াত নেতাকে জেলে আটক করা হয়। ৯ মাস পর সুপ্রীম কোর্ট রায় দেয় যে, জামায়াতকে বে-আইনী ঘোষণা করাটাই বে-আইনী হয়েছে।
  • মুসলিম জাতীয়তা পরিত্যাগের রাজনৈতিক পরিণাম: যেসব রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ মুসলিম জাতীয়তার চিন্তাধারা পরিত্যাগ করে **ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাকেই রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসাবে গ্রহণ করলেন**, তারা স্বাভাবিক কারণেই নিখিল পাকিস্তানভিত্তিক রাজনীতি করার অযোগ্য হয়ে পড়লেন। কারণ, পাঠান জাতীয়তার পতাকাবাহী নেতা বাংলাভাষীদের নিকট গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সিন্ধী জাতীয়তাবাদী নেতা পাঠানদের নেতা বলে গণ্য হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু যারা রাজনীতি করেন, তারা অবশ্যই ক্ষমতায় যেতে চান। সুতরাং যারা শুধু পূর্ব পাকিস্তানভিত্তিক রাজনীতি করার সদ্ধিান্ত নিলেন, তাদের ক্ষমতায় যেতে হলে **পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ছাড়া আর কোন পথ ছিল না।**
  • নির্বাচনের পর: পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় আইনসভায় আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলে পরিণত হওয়ায় শেখ মুজিবকে ইয়াহইয়া খান পাকিস্তানের ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী বলে মন্তব্য করা সত্ত্বেও **ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকলেন।** সে সময় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বারবার জোর দাবি জানানো হলো যে, **ব্যালটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংখ্যাগুরু দলের হাতে ক্ষমতা হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া হোক।** কারণ, জামায়াত আশাংকা করেছিলো যে, ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব হলে রাজনৈতিক সংকটের সাথে সাথে দেশে চরম বিশৃংখলা দেখা দেবে। সে সময়কার দৈনিক পত্রিকাগুলো জামায়াতের এ দাবির ঐতিহাসিক সাক্ষী।
  • এরপর যা ঘটল : **২৫ শে মার্চ দিবাগত রাতে টিক্কা খানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ঢাকা শহরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল** এবং ব্যাপক হত্যা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে চরম সন্ত্রাস সৃষ্টি করে অসহযোগ আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করল। কয়েক রাতের সামরিক অপারেশনে ঢাকা মহানগরী স্তব্ধ হয়ে গেল এবং রাজধানী তাদের পুনর্দখলে এলো। ঢাকার বাইরে সব জেলায়ই এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। যেসব শহরে অবাংগালী (বহিার নামে) উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ছিল, সেখানে বিহারীদেরকে হত্যা করে ঢাকার প্রতিশোধ নেয়া হলো। (চরম ইসলাম বিরোধী অন্যায় কাজ)
  • স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনঃ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ভারতে আশ্রয় নিলেন। পাক সেনাবাহিনীর ভ্রান্তনীতির ফলে দেশের **গোটা হিন্দু সম্প্রদায় পাকিস্তান বিরোধী হয়ে গেল।** ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও অধিকাংশ সমাজতন্ত্রী দল পাকিস্তান থেকে হওয়ার জন্য সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো। (পাকিস্থান সেনাবাহীনী ইসলাম অনুযায়ী কাজ করে নি)

★ অধ্যায় ০৪ : ভারত বিরোধীদের পেরেশানীঃ

  • ভারতের ভূমিকা
  • **ভারত বিরোধীদের পেরেশানী**: পাকিস্তান কায়েম হবার পর ভারতের নেহেরু সরকার হায়দ্রাবাদ ও কাশ্মীর নিয়ে যে হিংস্র খেলা দেখিয়েছেন, মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমিকে পংগু করার জন্য যত রকম প্রচেষ্টা ভারতের পক্ষ থেকে হয়েছে, পূর্ব বাংলার সীমান্ত নিয়ে ভারত বার বার যে ধোঁকাবাজি করেছে, সর্বোপরি **ফারাক্কা বাঁদ দিয়ে গংগার পানি আটকে রেখে উত্তরবংগকে মরুভূমি বানাবার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে**, তাতে এদেশের কোন সচেতন মুসলিমের পক্ষে ভারত সরকার এদেশের বন্ধু মনে করা কিছুতেই সম্ভব ছিল না। বিশেষ করে ভারতের সংখ্যালুঘু মুসলিমদের উপর যে হিংস্র আচরণ অব্যাহতভাবে চলছিল, তাতে প্রত্যেক সচেতন মুসলিমদের অন্তরেই পেরেশানী সৃষ্টি হলো।

★ অধ্যায় ০৫ : স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনের পটভূমিঃ

  • স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনের পটভূমি
  • সরকারের ভ্রান্তনীতি
  • রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে
  • গণতন্ত্রের প্রশ্নে
  • অর্থনৈতিক ময়দানে
  • **ভুট্টো-ইয়াহইয়া ষড়যন্ত্র**

★ অধ্যায় ০৬ : ইসলামপন্থীদের সংকটঃ

  • বাংলাদেশ আন্দোলনে ইসলামপন্থীদের সংকট
  • **ভারতবিরোধী ও ইসলামপন্থীদের ভূমিকাঃ** ভারতবিরোধী ও ইসলামপন্থীরা উভয় সংকটে পড়ে গেল। যদিও তারা ইয়াহইয়া সরকারের সন্ত্রাসবাদী দমনীতিকে দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর মনে করতেন, তবুও এর প্রকাশ্য বিরোধিতা করার কোন সাধ্য তাদের ছিল না। তারা একদিকে দেখতে পেল যে, মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা আক্রমণ করে ইয়াহইয়া সরকারকে বিব্রত করার জন্য কোন গ্রামে রাতে আশ্রয় নিয়ে কোন পুল না থাকায় বোমা ফেলেছে, আর সকালে পাক বাহিনী যেয়ে ঐ গ্রামটাই জ্বালিয়ে দিয়েছে। এভাবে জনগণ এক চরম অসহায় অবস্থায় পড়ে গেলো। **ভারতবিরোধী ও ইসলামপন্থীরা শান্তি কমিটি কায়েম করে সামরিক সরকার ও অসহায় জনগণের মধ্যে যোগসূত্র কায়েম করার চেষ্টা করলেন, যাতে জনগণকে রক্ষা করা যায়** এবং সমারিক সরকারকে যুলুম করা থেকে যথাসাধ্য ফিরিয়ে রাখা যায়।
  • একথা ঠিক যে, শান্তি কমিটিতে যারা ছিলেন, তাদের সবার চারিত্রিক মান এক ছিল না। তাদের মধ্যে এমন লোকও ছিল, যারা সুযোগ মতো অন্যায়ভাবে বিভিন্ন স্বার্থ আদায় করেছে। (তারা পরবর্তীতে ভারতীয় দালাল আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতায় পরিনত হয়েছিল )

★ অধ্যায় ০৭ : ৭১-এ জামায়াতের ভূমিকাঃ

  • জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভূমিকা
  • **৭১-এ জামায়াতের ভূমিকা**: জামায়াতে ইসলামী যেহেতু ইসলামকে বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে একটি বিজ্ঞানসম্মত কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল, সেহেতু কোন সরকারই জামায়াতকে সুনজরে দেখেনি। তদুপরি ইসলামেরই নীতি অনুযায়ী গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু করার জন্য জামায়াতে ইসলামী প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে এসেছে।
  • জামায়াতে ইসলামীর দৃষ্টিতে পূর্বপাকিস্তানের সমস্যা কী ছিল?

★ অধ্যায় ০৮ : বংগভংগ ও পূর্ব বাংলার উন্নয়নঃ

  • বংগভংগ আন্দোলন
  • বংগভংগ বাতিল আন্দোলন
  • পূর্ব বাংলার উন্নয়ন
  • কেন সার্বিক উন্নয়ন হলো না? এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, পূর্ব বংগের সার্বিক উন্নয়ন না হওয়ার জন্য পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারই প্রধানত দায়ী। ইংরেজ চলে যাবার পর প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে যারা কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার পরিচালনা করলেন, তাদের মধ্যে পূর্ববপংগের কোন বড় কর্মকর্তা ছিল না। আর পাকিস্তান আন্দোলনের যেসব নেতা কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্বে ছিলেন, তাদের মধ্যে পূর্ববংগের যারা প্রতিনিধিত্ব করছিলেন, তারা এত অনভিজ্ঞ ও দুর্বল ছিলেন যে, পূর্ববংগের উন্নয়নের ব্যাপারে প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের যতটা করণীয় ছিল তার সামান্য কিছুই আদায় করা সম্ভব হয়েছে।
  • নি:স্বার্থ নেতৃত্বের অভাব

★ অধ্যায় ০৯ : এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার রক্ষক কারা?

  • বাংলাদেশ একটি পৃথক স্বাধীন দেশ হিসাবে কায়েম হবার দেড় যুগ পরেও যারা ’৭১-এর ভূমিকার কারণে যারা এদেশে ভারতবিরোধী ও ইসলামপন্থী হিসাবে চিহ্নিত, তাদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ হবার পর এমন কোন কাজ হয়েছে কি, যা এদেশের স্বাধীনতার সামান্য বিরোধী বলে প্রমাণ করা যায়? একথা সবাই স্বীকার করতে বাধ্য যে, এদেশের স্বাধীনতার উপর যদি কোথাও থেকে আঘাত আসে, তা **একমাত্র ভারত থেকেই আসতে পারে।**
  • শেষ কথা

★ অধ্যায় ১০ : যারা বাংলাদেশ আন্দোলনে শরীক হয়নি তার কি স্বাধীনতা বিরোধী ছিল?

  • ১৯৭০এর নির্বাচনের দীর্ঘ অভিযানে যে, **“আমরা ইসলাম বিরোধী নই” এবং “আমরা পাকিস্তান থেকে আলাদা হতে চাই না”**। জনগণ তাকে ভোট দিয়েছিলেন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য। পাকিস্তান থেকে বিচ্চিন্ন হবার কোন মেন্ডট তিনি নেননি। নির্বাচনের পরও এ জাতীয় সুষ্পষ্ট কোন ঘোষণা তিনি দেননি। তাই ১৯৭১-এর যারা বাংলাদেশ আন্দোলনে শরীক হয়নি, তারা **দেশের স্বাধীনতার বিরোধী ছিল না।**
  • রাজনৈতিক মতপার্থক্য ও স্বাধীনতাবিরোধী হওয়া এক কথা নয়
  • শেরে বাংলার উদাহরণ
  • শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উদাহরণ

Top


মুখস্থঃ


🌿 পরামর্শ নিয়ে আয়াত

পরামর্শ (শুরা) সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত

পরামর্শ বা 'শুরা' মুমিনদের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং রাসূল (সা.)-কেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

১. যখন সংকল্প করবে তখন আল্লাহর উপর নির্ভর করবে

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ ۖ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ ۖ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ

"সুতরাং আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে **পরামর্শ কর।** অতঃপর যখন সংকল্প করবে তখন আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে ভালবাসেন।"

রেফারেন্স: সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত: ১৫৯

২. মুমিনদের বৈশিষ্ট্য: পারস্পরিক পরামর্শ

وَالَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِرَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَمْرُهُمْ شُورَىٰ بَيْنَهُمْ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ

"আর যারা তাদের রবের ডাকে সাড়া দেয়, সালাত কায়েম করে এবং তাদের কার্যাবলী **পরস্পর পরামর্শের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।** আর তাদেরকে আমরা যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।"

রেফারেন্স: সূরা আশ-শূরা (৪২), আয়াত: ৩৮

🌿 পরামর্শ নিয়ে হাদিস

১. পরামর্শকারী আমানতদার

الْمُسْتَشَارُ مُؤْتَمَنٌ

"যাঁর কাছে **পরামর্শ চাওয়া হয়, সে আমানতদার**।"

রেফারেন্স: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৬৬; সুনানে তিরমিযী, হাদিস: ২৮২২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৭৪৫

২. পরামর্শ ছাড়া কাজ না করা

مَا خَابَ مَنِ اسْتَخَارَ، وَلاَ نَدِمَ مَنِ اسْتَشَارَ

"যে ইস্তিখারা (আল্লাহর কাছে কল্যাণ চাওয়া) করে, সে ব্যর্থ হয় না এবং যে **পরামর্শ করে, সে অনুতপ্ত হয় না**।" (যদিও এটি ইস্তিখারা সম্পর্কিত হাদিসের অংশ, তবে পরামর্শের ফলপ্রসূতা তুলে ধরে)

রেফারেন্স: আল-মুজাম আল-আওসাত, ইমাম তাবরানী, হাদিস: ৮৩৯৬ (এটি দুর্বল সূত্রে বর্ণিত, তবে এর অর্থ সমর্থিত)

৩. পরামর্শভিত্তিক সমাজব্যবস্থার গুরুত্ব

إِذَا كَانَتْ أُمَرَاؤُكُمْ خِيَارَكُمْ، وَأَغْنِيَاؤُكُمْ سُمَحَاءَكُمْ، وَأَمْرُكُمْ شُورَىٰ بَيْنَكُمْ، فَظَهْرُ الْأَرْضِ خَيْرٌ لَكُمْ مِنْ بَطْنِهَا

"যখন তোমাদের **নেতারা হবেন ভালো মানুষ**, তোমাদের ধনীরা হবেন দানশীল এবং **তোমাদের কার্যক্রম চলবে পরামর্শের ভিত্তিতে,** তখন মাটির উপরের অংশ (জীবন) তোমাদের জন্য নিচের অংশ (মৃত্যু) থেকে উত্তম হবে।"

রেফারেন্স: সুনানে তিরমিযী, হাদিস: ২২৬৬ (দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত, তবে পরামর্শের দিকটি ইসলামী নীতি হিসেবে স্বীকৃত)

🔼


মাসআলাঃ সাদাকা সংক্রান্তঃ

সাদাকা হলো

সাদাকা হলো যাকাত ছাড়াও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বেচ্ছায় সম্পদ ও ভালো ব্যবহার দ্বারা দান করা। এটি বিপদ দূর করে, মৃত্যুর কষ্ট কমায়, সম্পদ বৃদ্ধি করে এবং কেয়ামতে ছায়া হিসেবে কাজ করে। সাদাকা সাধারণ ও সাদাকায়ে জারিয়াহ (অবিচ্ছিন্ন) এই দুই ধরনের হতে পারে এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দায়িত্ব।

সাদাকার প্রকারভেদ ও বিধান

সাধারণ সাদাকা: যেমন: গরিব ও দুস্থদের টাকা বা অন্য কোনো জিনিস দান করা।

সাদাকায়ে জারিয়াহ: এটি এমন দান যা মৃত্যুর পরও সওয়াব দেয়, যেমন: একটি মসজিদ, মাদ্রাসা বা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে দান করা।

ফারজ বা ওয়াজিব সাদাকা: যাকাত হলো সাদাকার একটি বাধ্যতামূলক রূপ, যা নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে প্রদান করতে হয়। যাকাত ছাড়াও অন্য সব সাদাকা ঐচ্ছিক ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত।

সাদাকার গুরুত্ব ও উপকারিতা

  • বিপদ থেকে রক্ষা: সদকা আল্লাহর অসন্তোষ দূর করে এবং বিভিন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করে।
  • সম্পদ বৃদ্ধি: সদকা করলে সম্পদ কমে না, বরং আল্লাহ তা তা থেকে বরকত দান করে এবং সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারেন।
  • খারাপ মৃত্যু থেকে রক্ষা: সদকা খারাপ মৃত্যু থেকে রক্ষা করে এবং জীবনের শেষ সময় ভালো করে দেয়।
  • কেয়ামতে ছায়া: কেয়ামতের ভয়াবহ দিনে সদকা একটি ছায়া হিসেবে কাজ করবে।

সাদাকা দেওয়ার নিয়মাবলী

  • হালাল উপায়ে অর্জিত মাল: সাদাকা অবশ্যই হালাল বা বৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ থেকে দিতে হবে।
  • প্রিয় বস্তু দান: আল্লাহ তাআলা বলেন, "তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত পুণ্যের নাগাল পাবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে (আল্লাহর জন্য) ব্যয় করবে"।

সাদাকা কাকে দেওয়া যায়

  • অভাবগ্রস্ত, অসহায় ও দুস্থ মানুষ।
  • আল্লাহর পথে (যেমন: জিহাদ বা জনকল্যাণমূলক কাজে)।
  • যে কোনো ভালো ও উত্তম কাজে।

মাসআলাঃ

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

দান এবং সদকা মূলত একই জিনিস। আরবিতে সদকা আর বাংলায় দান। 'সদকা' -এর আক্ষরিক অর্থ 'ন্যায়পরায়ণতা' এবং দানকে বোঝায়।

ইসলামী পরিভাষায়; সদকাকে ‘বিনিময়ে কোন কিছু না চেয়ে একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার অভিপ্রায়ে কাউকে কিছু দেওয়া’ বোঝানো হয়েছে। এছাড়াও, আর-রাগিব আল-আসফাহানির মতে ‘সদকা হল যাকাতের মতো, আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার আশায়, ব্যক্তির যা কিছু есть তা থেকে দেয়াকে সদকা বলে।’

কিন্তু বাংলা ভাষায় কখনো কখনো দান কে হাদিয়ার অর্থে ব্যবহার করা হয়, সুতরাং যদি হাদিয়ার নিয়তে দেওয়া হয় তাহলে ধনী গরিব যে কাউকে দেওয়া যাবে।

আর যদি সদকা করা হয় তাহলে নিম্নের ব্যক্তিদের চেয়ে কাউকে দেওয়া যাবে। তুমি পরামর্শ থাকবে এমন কোথাও দান করা যার মাধ্যমে সওয়াব জারি থাকবে, যেটাকে সদকায়ে জারিয়া বলে। এক্ষেত্রে কোনো তালিবে ইলমের জন্য খরচ করা যেতে পারে অথবা কোন দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে দান করা যেতে পারে।

কাদের দান করা যাবে?

কুরআনে পরিস্কার তাদের তালিকা দেয়া হয়েছে। যথা-

إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ [٩:٦٠]

যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদে হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। {সূরা তাওবা-৬০}

মোট ৮ ধরণের ব্যক্তিকে যাকাত ও সদকাহ তথা দান দেয়ার কথা কুরআনে বর্ণিত। যথা-

  1. গরীব। যার সম্পদ আছে কিন্তু নেসাব পরিমাণ মালের মালিক নয়।
  2. মিসকিন। যার একদমই কোন সম্পদ নেই।
  3. ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য শরীয়ত নির্দিষ্ট যাকাত আদায়কারী আমেল। এটা ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা নিযুক্ত হতে হবে। নিজে নিজে মনে করে নিলে হবে না। {জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-৬/৬৯}
  4. নব মুসলিমদের ইসলামের প্রতি মোহাব্বত বাড়ানোর জন্য উৎসাহমূলক যাকাত প্রদান।
  5. দাসমুক্তির জন্য। যেহেতু বর্তমানে দাসপ্রথা নেই। তাই এ খাতটি বাকি নেই।
  6. ঋণগ্রস্তের জন্য।
  7. ফী সাবিলিল্লাহ। তথা আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তিদের জন্য। এখন প্রশ্ন হল আল্লাহর রাস্তায় কারা আছে? ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেন এতে রয়েছেন- জিহাদরত মুজাহিদরা। তাদের জিহাদের অস্ত্র ও পাথেয় ক্রয় করার জন্য যাকাতের টাকা গ্রহণ করবে। হজ্বের সফরে থাকা দারিদ্র ব্যক্তির জন্য। ইলমে দ্বীন অর্জনকারী দারিদ্র ব্যক্তির জন্য। {আদ দুররুল মুখতার-৩৪৩, হিদায়া-১/১৮৫, রূহুল মাআনী-৬/৩১৩}
  8. সফররত ব্যক্তিকে। যার টাকা পয়সা আছে বাড়িতে। কোন সফর অবস্থায় অসহায়। তাকে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ।

উপরোক্ত ক্যাটাগরিতে যাকাত আদায় করলেই যাকাত ও সদকাহ আদায় হবে।

والله اعلم بالصواب

----

Source মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদিনা মুনাওয়ারা ৷

আরো দেখুন. সাদাকার ফযীলত

🔼

"সর্বস্বত সংরক্ষিত© ২০২৩ এস এম হোমিওপ্যাথি মেডিকেল সেন্টার; ব্লগঃ ডিজাইনে SIAAM