
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য দরস, বই নোট, বিষয়ভিত্তিক আয়াত-হাদিস ও মাসয়ালা সংকলন
আরবি, উচ্চারণ ও অর্থ:
| আরবি | উচ্চারণ | অর্থ |
|---|---|---|
| بِسْمِ اللَّهِ الرَّحمٰنِ الرَّحِيْمِ | বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম | পরম করুনাময়, মেহেরবান আল্লাহর নামে। |
| ١. قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ | কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ | বলুন, তিনিই আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়। |
| ٢. اللَّهُ الصَّمَدُ | আল্লাহুস্ সামাদ | আল্লাহ অমুখাপেক্ষী (তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী)। |
| ٣. لَمْ يَلِد وَلَم يولَدْ | লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ | তাঁর কোনো সন্তান নেই এবং তিনি কারো সন্তান নন। |
| ٤. وَلَمْ يَكُن لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ | ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ | এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। |
নাম: আল-ইখলাস (একনিষ্ঠতা)।
সূরা: ১১২।
অবতীর্ণ: মক্কায়, কুরাইশদের এক প্রশ্নের জবাবে।
সূরার নামকরণ: পবিত্র কুরআনুল কারীমের মাত্র দুটি সূরা যে সূরা দুটির নামকরণ সূরায় উল্লিখিত শব্দ বা সূরায় বর্ণিত ঘটনা থেকে করা হয়নি।
বরং নামকরণ করা হয়েছে সূরার মুখ্য উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। একটি হলো সূরা ফাতিহা আর দ্বিতীয়টি হলো সূরা ইখলাস। অত্র সূরায় একজন সত্যিকার
মা‘বূদের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।
الإخلَاص শব্দের অর্থ : একনিষ্ঠভাবে কোন কিছু করা। যেমন বলা হয় : أخلص لله عمله সে একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহ তা‘আলার জন্যই তার আমলকে
সম্পাদন করেছে। সূরাতে যেহেতু আল্লাহ তা‘আলার পরিচয় ও তাওহীদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে তাই إخلَاص নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
সূরাটির ফযীলত: সূরাটি আকারে ছোট হলেও ফযীলতের দিক দিয়ে অনেক বড়। আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) তাঁর সাহাবীদের বললেন : তোমাদের কেউ কি রাতে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করতে অপারগ হবে? এটা তাদের জন্য কষ্ট কর হয়ে গেল।
তারা বলল : হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাঃ)! আমাদের কে এরূপ করতে সক্ষম হবে? তখন রাসূল (সাঃ) বললেন : (قُلْ هُوَ اللّٰهُ أَحَدٌ) সূরাটি
কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য। (সহীহ বুখারী হা. ৫০১৫) অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়লে যে নেকী হবে সেই নেকী এ সূরা পাঠ করলে
পাওয়া যাবে। এভাবে এ সূরাটি তিনবার পড়লে সম্পূর্ণ কুরআন পড়ার নেকী পাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ। কারণ পবিত্র কুরআনে মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে
আলোকপাত করা হয়েছে। তাওহীদ, আহকাম ও নসীহত।
সূরা ইখলাসে তাওহীদ পূর্ণভাবে থাকার কারণে তা কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য,
এ ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। (ইবনু কাসীর) আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত নাবী (সাঃ) এক সাহাবীকে একদল বাহিনীর নেতা বানিয়ে প্রেরণ
করলেন। সেই লোক বাহিনীর ইমামতি করে যখন সালাত আদায় করতেন তখন প্রত্যেক রাকাতেই সূরা ইখলাস দ্বারা কেরাত শেষ করতেন। সবাই যখন
ফিরে আসল এবং নাবী (সাঃ)-কে বিষয়টি বলল তখন নাবী (সাঃ) বললেন : তাকে জিজ্ঞাসা কর কেন সে এরূপ করেছে? তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে
তিনি জবাবে বললেন : আমি এ সূরা পড়তে ভালবাসি। কেননা এতে দয়াময় আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলি রয়েছে। নাবী (সাঃ) বললেন : তাকে বলে
দাও আল্লাহ তা‘আলা তাকে ভালবাসেন। (সহীহ বুখারী হা. ৭৩৭৫)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট আগমন করলেন এবং বললেন : আমি এ সূরাকে ভালবাসি।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : এ সূরাকে ভালবাসার কারণে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (আহমাদ ৩/১৪১, সনদ সহীহ।)
আব্দুল্লাহ বিন বুরাইদাহ (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে মাসজিদে প্রবেশ করেন। এমন সময় এক
ব্যক্তি সালাত আদায় করছিল আর দু‘আ করে বলছিল। اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللّٰهُ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
“হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কামনা করছি ঐ বাক্যসমূহের মাধ্যমে যে, নিশ্চয়ই আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমিই আল্লাহ। তুমি ছাড়া সত্যিকার কোন
ইলাহ নেই। তুমি একক, অমুখাপেক্ষী, যিনি কাউকে জন্ম দেননি, তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি এবং তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।” রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন
: ঐ সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! এ ব্যক্তি ইসমে আযমের দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার কাছে চেয়েছে। এ নামে চাইলে তিনি দেন আর এ নামে
ডাকলে তিনি ডাকে সাড়া দেন। (আবূ দাঊদ হা. ১৪৯৪, তিরমিযী হা. ৩৪৭৫, ইবনু মাযাহ হা. ৩৮৫৮, সনদ সহীহ)
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (সাঃ) প্রত্যেক রাতে যখন বিছানায় যেতেন তখন দু হাত একত্রিত করে ফুঁ দিতেন, অতঃপর সূরা ইখলাস,
সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করতেন। তারপর যথাসম্ভব দু হাত দিয়ে শরীর মাসাহ করতেন। তিনি প্রথমে মাথা, মুখমন্ডল ও শরীরের সম্মুখ ভাগ
থেকে শুরু করতেন। (সহীহ বুখারী হা. ৫০১৭)
শানে নুযূল: জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : এক গ্রাম্য ব্যক্তি নাবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বলল : তোমার রবের বংশ তালিকা বর্ণনা কর।
তখন এ সূরা অবতীর্ণ হয়। (বায়হাকী ৭/১৪৬, হাসান।)
উবাই বিন কাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, মুশরিকরা নাবী (সাঃ)-কে বলল : হে মুহাম্মাদ তোমার রবের বংশ তালিকা বর্ণনা কর। তখন এ সূরাটি অবতীর্ণ
হয়।
প্রত্যেক জিনিস যা জন্ম নেয় তা অবশ্যই মারা যাবে এবং যে জিনিস মারা যাবে পরবর্তী বংশধর তার ওয়ারিশ হবে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা মারা
যাবেন না এবং তাঁর ওয়ারিশও কেউ হবে না।
সুরাটির বিশেষত্ব:
তাফসীর: একজন সত্যিকার মা‘বূদের চারটি বৈশিষ্ট্য এ সূরাতে আলোচনা করা হয়েছে। এ চারটি বৈশিষ্ট্য যে মা‘বূদের মাঝে পাওয়া যাবে তিনিই একমাত্র যাবতীয় ইবাদত পাওয়ার হকদার। এ চারটি বৈশিষ্ট্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো বা কোন কিছুর মাঝে পাওয়া যায় না। তাই সব বাতিল মা‘বূদ বাদ দিয়ে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা উচিত।
প্রথম বৈশিষ্ট্য: যে মা‘বূদের ইবাদত করা হবে তার প্রথম বৈশিষ্ট্য হবে তিনি একক হবেন তার কোন অংশীদার থাকবে না।
এ বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোন কিছুর নেই। তাই এখানে আল্লাহ তা‘আলা أَحَد শব্দটি ব্যবহার করেছেন যার কোন দ্বিবচন বা বহুবচন হয় না।
আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া যার ইবাদত করা হয় সবই মানুষের বানানো ও মস্তিস্কপ্রসূত চিন্তা-চেতনা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِھ۪ٓ اِلَّآ اَسْمَا۬ئً سَمَّیْتُمُوْھَآ اَنْتُمْ وَاٰبَا۬ؤُکُمْ مَّآ اَنْزَلَ اللہُ بِھَا مِنْ سُلْطٰنٍﺚ اِنِ الْحُکْمُ اِلَّا لِلہِﺚ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْٓا اِلَّآ اِیَّاھُﺚ ذٰلِکَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ وَلٰکِنَّ اَکْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْنَ)
‘‘তাঁকে (আল্লাহকে) ছেড়ে তোমরা কেবল কতকগুলো নামের ‘ইবাদত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছ; এগুলোর কোন
প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি। বিধান দেবার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এটাই সঠিক দীন
কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়।’’ (সূরা ইউসুফ ১২: ৪০)
এ থেকে আরো পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার শানে উপযোগী নয় এমন নামে তাঁকে অভিহিত করা যাবে না, বরং আল্লাহ তা‘আলাকে
একমাত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত নামেই অভিহিত করতে হবে।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য: الصَّمَدُ অর্থাৎ যে মা‘বূদের ইবাদত করা হবে তিনি কোন কিছুর মুখাপেক্ষী হবেন না। তিনি কোন খাবার, পানীয় ও নিজ প্রয়োজন
পূরণের জন্য অন্যের সহযোগিতা গ্রহণ হতে মুক্ত হবেন। মোট কথা যিনি নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই এ আয়াতের তাফসীরে মুজাহিদসহ অনেক মুফাসসির
বলেছেন : الصَّمَدُ সামাদ হলেন তিনি যার মাঝে কোন শূন্যতা নেই। (ইবনু জারীর /২২২) এ বৈশিষ্ট্যটিও একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার রয়েছে,
তাই তিনিই একমাত্র ইবাদত পাওয়ার হকদার।
তৃতীয় বৈশিষ্ট্য: (لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ) একজন সত্যিকার মা‘বূদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তিনি কাউকে জন্ম দেন না। অর্থাৎ তার কোন
স্ত্রী-সন্তান নেই। এটাও একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন : (بَدِيْعُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ ط أَنّٰي يَكُوْنُ لَه۫ وَلَدٌ وَّلَمْ تَكُنْ لَّه۫ صَاحِبَةٌ ط وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ ج وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ)
“তিনি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা, তাঁর সন্তান হবে কিরূপে? অথচ তাঁর তো কোন স্ত্রী নেই। তিনিই তো সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক বস্তু
সম্বন্ধে তিনিই সবিশেষ অবহিত।” (সূরা আন‘আম ৬: ১০১)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন : (وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمٰنُ وَلَدًاﮧﺚ لَقَدْ جِئْتُمْ شَیْئًا اِدًّاﮨﺫ تَکَادُ السَّمٰوٰتُ یَتَفَطَّرْنَ مِنْھُ وَتَنْشَقُّ الْاَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ ھَدًّاﮩﺫ اَنْ دَعَوْا لِلرَّحْمٰنِ وَلَدًاﮪﺆ وَمَا یَنْۭبَغِیْ لِلرَّحْمٰنِ اَنْ یَّتَّخِذَ وَلَدًاﮫﺚ اِنْ کُلُّ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ اِلَّآ اٰتِی الرَّحْمٰنِ عَبْدًاﮬﺚ)
“তারা বলে, ‘দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তোমরা এমন এক বীভৎস বিষয়ের অবতারণা করেছ; যাতে আকাশসমূহ বিদীর্ণ হবে, পৃথিবী খণ্ড-বিখণ্ড হবে ও পর্বতগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পতিত হবে, যেহেতু তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভনীয় নয়!
আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের নিকট বান্দারূপে উপস্থিত হবে না।” (সূরা মারইয়াম ১৯: ৮৮-৯৩)
মূলত: কথা হচ্ছে যে, একজন সত্যিকার মা‘বূদকে কেউ জন্ম দিতে পারে না এবং বানাতেও পারে না।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন : আদম সন্তান আমাকে অবিশ্বাস করে অথচ এটা তার জন্য সমীচীন নয়।
সে আমাকে গালি দেয় অথচ এটাও তার জন্য সমীচীন নয়। আমাকে অবিশ্বাস করার অর্থ হলো সে বলে : আমাকে আল্লাহ তা‘আলা পুনরায় সৃষ্টি
করতে পারবেন না। যেমন আমাকে প্রথমবার সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, অথচ দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা প্রথমবার সৃষ্টি করার চেয়ে কি
অধিক সহজ নয়?
আর আমাকে গালি দেয়ার অর্থ হলো : সে বলে : আমার নাকি সন্তান আছে, অথচ আমি একক, অদ্বিতীয়, অমুখাপেক্ষী, আমার কোন সন্তান নেই
, আমাকে কেউ জন্ম দেয়নি এবং আমার সমকক্ষ ও সমতুল্য কেউ নেই। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৭৪, সহীহ মুসলিম হা. ২০৭৮)
চতুর্থ বৈশিষ্ট্য: একজন সত্যিকার মা‘বূদের সত্ত্বা, গুণাবলী ও কাজকর্ম অন্য কোনো কিছুরই সমতুল্য ও সমকক্ষ হবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা
বলেন : (لَيْسَ كَمِثْلِه۪ شَيْءٌ ج وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ) “কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। (সূরা শুরা ৪২: ১১)
এ চারটি বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তা‘আলার রয়েছে, তাই আল্লাহ তা‘আলা একমাত্র সমস্ত মাখলুকের ইবাদত পাওয়ার যোগ্য; অন্য কোন মূর্তি, দেব-দেবী
ইত্যাদি নয়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
লেখক: অধ্যাপক গোলাম আযম
"পলাশী থেকে বাংলাদেশ" হলো অধ্যাপক গোলাম আযমের লেখা একটি বই, যা **১৯০ বছর ধরে ব্রিটিশ শাসনের পটভূমি, পাকিস্তান আমলের কুশাসন, এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন** সম্পর্কে আলোচনা করে। এই বইটিতে **১৯৭১ সালে জামায়াতের রাজনৈতিক ভূমিকা** বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
লেখক: অধ্যাপক গোলাম আযম
বইটিতে **১০ টি অধ্যায়** রয়েছে।
পরামর্শ বা 'শুরা' মুমিনদের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং রাসূল (সা.)-কেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ ۖ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ ۖ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ
"সুতরাং আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে **পরামর্শ কর।** অতঃপর যখন সংকল্প করবে তখন আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে ভালবাসেন।"
রেফারেন্স: সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত: ১৫৯وَالَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِرَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَمْرُهُمْ شُورَىٰ بَيْنَهُمْ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
"আর যারা তাদের রবের ডাকে সাড়া দেয়, সালাত কায়েম করে এবং তাদের কার্যাবলী **পরস্পর পরামর্শের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।** আর তাদেরকে আমরা যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।"
রেফারেন্স: সূরা আশ-শূরা (৪২), আয়াত: ৩৮الْمُسْتَشَارُ مُؤْتَمَنٌ
"যাঁর কাছে **পরামর্শ চাওয়া হয়, সে আমানতদার**।"
রেফারেন্স: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৬৬; সুনানে তিরমিযী, হাদিস: ২৮২২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৭৪৫مَا خَابَ مَنِ اسْتَخَارَ، وَلاَ نَدِمَ مَنِ اسْتَشَارَ
"যে ইস্তিখারা (আল্লাহর কাছে কল্যাণ চাওয়া) করে, সে ব্যর্থ হয় না এবং যে **পরামর্শ করে, সে অনুতপ্ত হয় না**।" (যদিও এটি ইস্তিখারা সম্পর্কিত হাদিসের অংশ, তবে পরামর্শের ফলপ্রসূতা তুলে ধরে)
রেফারেন্স: আল-মুজাম আল-আওসাত, ইমাম তাবরানী, হাদিস: ৮৩৯৬ (এটি দুর্বল সূত্রে বর্ণিত, তবে এর অর্থ সমর্থিত)إِذَا كَانَتْ أُمَرَاؤُكُمْ خِيَارَكُمْ، وَأَغْنِيَاؤُكُمْ سُمَحَاءَكُمْ، وَأَمْرُكُمْ شُورَىٰ بَيْنَكُمْ، فَظَهْرُ الْأَرْضِ خَيْرٌ لَكُمْ مِنْ بَطْنِهَا
"যখন তোমাদের **নেতারা হবেন ভালো মানুষ**, তোমাদের ধনীরা হবেন দানশীল এবং **তোমাদের কার্যক্রম চলবে পরামর্শের ভিত্তিতে,** তখন মাটির উপরের অংশ (জীবন) তোমাদের জন্য নিচের অংশ (মৃত্যু) থেকে উত্তম হবে।"
রেফারেন্স: সুনানে তিরমিযী, হাদিস: ২২৬৬ (দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত, তবে পরামর্শের দিকটি ইসলামী নীতি হিসেবে স্বীকৃত)সাদাকা হলো যাকাত ছাড়াও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বেচ্ছায় সম্পদ ও ভালো ব্যবহার দ্বারা দান করা। এটি বিপদ দূর করে, মৃত্যুর কষ্ট কমায়, সম্পদ বৃদ্ধি করে এবং কেয়ামতে ছায়া হিসেবে কাজ করে। সাদাকা সাধারণ ও সাদাকায়ে জারিয়াহ (অবিচ্ছিন্ন) এই দুই ধরনের হতে পারে এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দায়িত্ব।
সাধারণ সাদাকা: যেমন: গরিব ও দুস্থদের টাকা বা অন্য কোনো জিনিস দান করা।
সাদাকায়ে জারিয়াহ: এটি এমন দান যা মৃত্যুর পরও সওয়াব দেয়, যেমন: একটি মসজিদ, মাদ্রাসা বা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে দান করা।
ফারজ বা ওয়াজিব সাদাকা: যাকাত হলো সাদাকার একটি বাধ্যতামূলক রূপ, যা নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে প্রদান করতে হয়। যাকাত ছাড়াও অন্য সব সাদাকা ঐচ্ছিক ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত।
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
দান এবং সদকা মূলত একই জিনিস। আরবিতে সদকা আর বাংলায় দান। 'সদকা' -এর আক্ষরিক অর্থ 'ন্যায়পরায়ণতা' এবং দানকে বোঝায়।
ইসলামী পরিভাষায়; সদকাকে ‘বিনিময়ে কোন কিছু না চেয়ে একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার অভিপ্রায়ে কাউকে কিছু দেওয়া’ বোঝানো হয়েছে। এছাড়াও, আর-রাগিব আল-আসফাহানির মতে ‘সদকা হল যাকাতের মতো, আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার আশায়, ব্যক্তির যা কিছু есть তা থেকে দেয়াকে সদকা বলে।’
কিন্তু বাংলা ভাষায় কখনো কখনো দান কে হাদিয়ার অর্থে ব্যবহার করা হয়, সুতরাং যদি হাদিয়ার নিয়তে দেওয়া হয় তাহলে ধনী গরিব যে কাউকে দেওয়া যাবে।
আর যদি সদকা করা হয় তাহলে নিম্নের ব্যক্তিদের চেয়ে কাউকে দেওয়া যাবে। তুমি পরামর্শ থাকবে এমন কোথাও দান করা যার মাধ্যমে সওয়াব জারি থাকবে, যেটাকে সদকায়ে জারিয়া বলে। এক্ষেত্রে কোনো তালিবে ইলমের জন্য খরচ করা যেতে পারে অথবা কোন দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে দান করা যেতে পারে।
কুরআনে পরিস্কার তাদের তালিকা দেয়া হয়েছে। যথা-
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ [٩:٦٠]
যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদে হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। {সূরা তাওবা-৬০}
মোট ৮ ধরণের ব্যক্তিকে যাকাত ও সদকাহ তথা দান দেয়ার কথা কুরআনে বর্ণিত। যথা-
উপরোক্ত ক্যাটাগরিতে যাকাত আদায় করলেই যাকাত ও সদকাহ আদায় হবে।
والله اعلم بالصواب
---- Source মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদিনা মুনাওয়ারা ৷