logo

HOMOEOPATHY DOCTOR

📚 Home

অগ্রসর কর্মী মানয়োন্নয়ন গাইড

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য দরস, বই নোট, বিষয়ভিত্তিক আয়াত-হাদিস ও মাসয়ালা সংকলন

মানোয়ন্নন গাইড ডাউনলোড

📚 অনুশীলনী -০১: জানুয়ারী-১ম সপ্তাহঃ

# দারস তৈরী - সূরা বাকারা ( আয়াত ২৫৫) # বই নোট: গঠনতন্ত্র # তাওহিদ সংক্রান্ত আয়াত # তাওহিদ সংক্রান্ত হাদিস # নামাজের প্রকারভেদ ও মাসয়ালা

দারস তৈরী - সূরা বাকারা ( আয়াত ২৫৫)

اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ اَلۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ ۬ۚ لَا تَاۡخُذُهٗ سِنَۃٌ وَّ لَا نَوۡمٌ ؕ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ مَنۡ ذَا الَّذِیۡ یَشۡفَعُ عِنۡدَهٗۤ اِلَّا بِاِذۡنِهٖ ؕ یَعۡلَمُ مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ مَا خَلۡفَهُمۡ ۚ وَ لَا یُحِیۡطُوۡنَ بِشَیۡءٍ مِّنۡ عِلۡمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرۡسِیُّهُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ ۚ وَ لَا یَـُٔوۡدُهٗ حِفۡظُهُمَا ۚ وَ هُوَ ﴾الۡعَلِیُّ الۡعَظِیۡمُ ﴿۲۵۵
(২৫৫) আল্লাহ ; তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সব কিছুর ধারক। [১] তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্ত তাঁরই। কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে, তা তিনি অবগত আছেন। যা তিনি ইচ্ছা করেন, তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর কুরসী [২] আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী পরিব্যাপ্ত। আর সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না। তিনি সুউচ্চ, মহামহিম।
সুরা আল বাকারা, নামকরনঃ
সূরা আল বাকারার নামকরণ করা হয়েছে 'বাকারাহ' শব্দটি থেকে, যার অর্থ গাভী। এই নামকরণ করা হয়েছে কারণ এই সূরার ৬৭ থেকে ৭৩ নম্বর আয়াতে হযরত মুসা (আ.)-এর সময়ের বনী ইসরাঈলের একটি গাভী জবাই করার ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।

সূরা আল বাকারার নামকরণের প্রেক্ষাপট:
সূরা আল বাকারার ৬৭ থেকে ৭৩ নম্বর আয়াতে বনী ইসরাঈল জাতির এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছিল, এবং হত্যার রহস্য উন্মোচনের জন্য আল্লাহ তা'আলা তাদের একটি গাভী জবাই করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই ঘটনাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হওয়ার কারণে, সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে "আল বাকারাহ" (অর্থ: গাভী)। কুরআনের অন্যান্য সূরার মতো, আল বাকারার নামকরণও একটি বিশেষ ঘটনার উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, যা এই সূরার বিষয়বস্তুকে নির্দেশ করে। সুতরাং, সূরা আল বাকারার নামকরণ "আল বাকারাহ" মূলত বনী ইসরাঈলের সেই গাভী জবাই করার ঘটনার সাথে সম্পর্কিত।

সূরা বাকারার শানে নুযুল (নাযিলের প্রেক্ষাপট):
বেশ বিস্তৃত এবং এর মধ্যে বিভিন্ন ঘটনা ও প্রেক্ষাপট অন্তর্ভুক্ত। এটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এতে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, বিধি-বিধান, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতি আচরণ, পূর্ববর্তী নবীদের কাহিনী, এবং ইহুদি ও মুনাফিকদের কার্যকলাপ সহ বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হয়েছে।

সূরা বাকারার বৈশিষ্ট সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • মদিনায় অবতীর্ণ: সূরা আল-বাকারার অধিকাংশ আয়াত মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে, যেখানে মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন সমস্যা ও জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
  • ইসলামের মৌলিক শিক্ষা: এই সূরায় তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত, ইবাদত, হালাল-হারাম, পারস্পরিক সম্পর্ক, ইত্যাদি ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
  • বিধি-বিধান: এতে সালাত, যাকাত, সাওম, হজ, বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার, ব্যবসা-বাণিজ্য সহ বিভিন্ন বিধি-বিধান আলোচনা করা হয়েছে।
  • পূর্ববর্তী নবীদের কাহিনী: হযরত মুসা (আ.), হযরত ইব্রাহীম (আ.) সহ বিভিন্ন নবীর কাহিনী ও তাদের উ¤ তের প্রতি আল্লাহর বিভিন্ন নির্দেশনার বর্ণনা রয়েছে।
  • মুনাফিক ও ইহুদিদের কার্যকলাপ: মদিনার ইহুদি ও মুনাফিকদের আচরণ এবং তাদের প্রতিবাদের প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ আয়াতও এই সূরায় অন্তর্ভুক্ত।
  • গাভীর ঘটনা: সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে 'বাকারাহ' (অর্থ গাভী), যা হযরত মুসা (আ.) এর সময়ের বনী ইসরাঈলের একটি গাভী জবাই করার ঘটনার সাথে সম্পর্কিত।
  • দীর্ঘতম সূরা: এটি কুরআনের সবচেয়ে দীর্ঘ সূরা এবং এতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আয়াত ও বিধি-বিধান রয়েছে।
  • সূরা বাকারার আয়াতগুলো নাজিলের প্রেক্ষাপট ও বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করা যায়।

বই নোট-গঠনতন্ত্রঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

 ভূমিকাঃ


 যেহেতু
  • মহান আল্লাহ তা’য়ালা ব্যতিত কোন ইলাহ নাই এবং নিখিল বিশ্বের সর্বত্র আল্লাহ তা’য়ালার প্রবর্তিত প্রাকৃতিক আইনসমুহ একমাত্র তাহারই বিচক্ষণতা ও শ্রেষ্ঠত্বের সাক্ষ্যদান করিতেছে
  • আল্লাহ তা’য়ালা মানুষকে তাঁহার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য পৃথিবীতে প্রেরণ করিয়াছেন।
  • আল্লাহ তা’য়ালা সত্যের নির্দেশনাসহ ‍যুগে যগে নবী-রাসুলগনকে প্রেরণ করিয়াছেন।
  • বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা. আল্লাহ তা’য়ালার সর্বশেষ নবী ও রাসুল এবং আল্লাহ তা’য়ালার প্রেরিত আল কুআন ও রাসুল সা. এর সুন্নাহই হইতেছে বিশ্বমানবতার অনুসরণীয় আদর্শ;।
  • মানুষকে তাহার পার্থিব জীবনকে ভাল-মন্দ কাজের পুঙ্খানো পুঙ্খানো হিসাব দিতে হইবে এবং বিচারের পর জান্নাত অথবা জাহান্নাম রুপে ইহার যথাযথ ফলাফল ভোগ করিতে হইবে।
  • আল্লাহ তা’য়ালার সস্তুটি অর্জণ করিয়া জাহান্নামের আজাব থেকে নাজাত এবং জান্নাতের অনন্ত সুখ ও অনাবিল শান্তি লাভের মধ্যেই মানব জীবনের প্রতৃত সাফল্য নিহিত।
 সেহেতু
  • এই সকল মৌলিক বিশ্বাস ও চেতনার ভিত্তিতে শোষণমুক্ত, ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠনের মহান উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এই গঠনতন্ত্র প্রণীত ও প্রবর্তিত হইল।
 ধারাঃ০১ - নামকরণ: এই সংগঠনের নাম হইবে- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
 ধারাঃ০২ - ঈমান ও আক্বীদা: কুরআন ও সহীহ হাদীসে নির্দেশিত ঈমান ও আক্বীদাহই জামায়াতে ইসলামীর অনুসারীগন পোষণ করিয়া থাকেন। তাহার মুল কথা হইলোঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ” অর্থাৎ আল্লাহ তা’য়ালা ব্যতিত কোন ইলাহ নাই মুহাম্মদ সা. আল্লাহ তা’য়ালার রাসুল।
ঈমান ও আক্বীদার প্রথমাংশ হলোঃ আল্লাহ তা’য়ালার একমাত্র ইলাহ হওয়া। অর্থাৎ-
  • আল্লাহ তা’য়ালা ব্যতিত আর কাহাকেও সাহায্যকারী মনে না করা।
  • আল্লাহ তা’য়ালা ব্যতিত আর কাহাকেও কল্যাণকামী মনে না করা।
  • আল্লাহ তা’য়ালা ব্যতিত আর কাহারও নিকট প্রার্থনা না করা।
  • আল্লাহ তা’য়ালা ব্যতিত আর কাহারও নিকট মাথানত না করা।
  • আল্লাহ তা’য়ালা ব্যতিত আর কাহাকেও ক্ষমতার মালিক মনে না করা।
ঈমান ও আক্বীদার দ্বিতিয়াংশ হলো- “মুহামদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’য়ালার রাসুল। অর্থাৎ
  • আল্লাহর রাসুল সা. এর হিদায়াত ও আইন বিধানকে দ্বিধাহীন চিত্তে গ্রহন করা।
  • যে কোন কাজে রাসুল সা. এর আদেশ ও নিষেধকে যথেষ্ট মনে করা।
  • রাসুল সা. ব্যতিত আর কাউকে নেতা না মানা ।
  • আল্লাহর কিতাব ও রাসুল সা. এর সুন্নাহই একমাত্র উৎস মনে করা।
  • সকল কিছুর উর্দ্ধে রাসুল সা. এর ভালবাসা।
  • রাসুল সা. কে সত্যের মাপকাঠি মনে করা।
  • রাসুল সা. ব্যতিত আর কারো আনুগত্য না করা ।
ধারাঃ০৩ - উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যঃ “বাংলাদেশে নিয়মতান্ত্রিকগনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন”

ধারাঃ০৪ - স্থায়ী কর্মনীতি
  • কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন কিংবা কোন কর্মপন্থা গ্রহনের সময় জামায়াত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শুধুমাত্র আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁর রাসুল সা. এর নির্দেশ ও বিধানের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করিবে।
  • উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হাসিলের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এমন কোন উপায় ও পন্থা অবলম্বন করিবেনা যাহা সততা ও বিশ্বাস পরায়নতার পরিপন্থি কিংবা যাহার ফলে দুনিয়ায় ফিতনা ও ফাসাদ তৈরি হয়।
  • বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উহার বাঞ্চিত সংশোধন ও সংস্কার কার্যকর করিবার জন্য নিয়মতান্ত্রিক ও গনতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করিবে। অর্থাৎ ইসলামের দাওয়াত সম্প্রসারণ, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানুষের মানবিক, নৈতিক চরিত্রের সংশোধন এবং বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করিবার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অনুকুলে জনমত গঠন করিবে।

ধারাঃ ০৫ - তিন দফা দাওয়াত

  • সাধারণভাবে সকল মানুষ ও বিশেষভাবে মুসলিমদের প্রতি জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’য়ালার দাসত্ব ও রাসুল সা. এর আনুগত্য করিবার আহবান।
  • ইসলাম গ্রহনকারী ও ঈমানের দাবীদার সকল মানুষের প্রতি বাস্তব জীবনে কথা ও কাজের মিল গরমিল পরিহার করিয়া খাঁটি ও পূর্ণ মুসলিম হওয়ার আহবান।
  • সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশে নিয়মতান্ত্রিক ও গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুবিচারপূর্ণ শাসন ক্বায়েম করিয়া সমাজ হইতে সকল প্রকার জুলুম, শোষণ, দুর্নীতি ও অবিচারের অবসান ঘটানোর আহবান।

ধারাঃ ০৬ - স্থায়ী কর্মসূচী

  • দাওয়াত ও দাবলীগ (চিন্তার পরিশুদ্ধি ও পূনর্গঠন)
  • তানযিম ও তারবিয়াত (সংগঠন ও প্রশিক্ষণ)
  • ইসlahে মু’য়াসারা (সমাজ সংস্কার ও সমাজসেবা)
  • ইসlahে হুকুমত(রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও সংশোধন)

ধারাঃ ০৭ - রুকন হইবার শর্তাবলী

  • ব্যক্তিগত জীবনে ফরজ ওয়াজীবসমূহ যথাযথভাবে আদায় করেন এবং কবীরা গুনাহ হইত বিরত থাকেন।
  • উপার্জনেরে এমন কোন পন্থা অবলম্বন না করেন যাহা আল্লাহ তা’য়ালার নাফরমানির পর্যায়ে পড়ে।
  • হারাম পথে অর্জিত কিংবা হকদারের হক নষ্ট করা কোন সম্পদ বা সম্পত্তি তাঁহার দখলে থাকিরে তাহা পরিত্যাগ করেন বা হক্বদারকে ফেরত দেন।
  • মৌলিক মানবীয় গুনাবলী অর্জনের বিচারে আশাব্যাঞ্জক অবস্থানে রয়েছেন।
  • এমন কোন পার্টি বা প্রতিষ্ঠানের সহিত সম্পর্ক না রাখেন যাহার মুলনীতি, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ইসলামের ঈমান ও আক্বীদা এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এবং কর্মনীতির পরিপন্থি।
  • জামায়াতের সাংগঠনিক দায়িত্বশীলগনের দৃষ্টিতে রুকন হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হইবেন।

ধারাঃ ০৯ - রুকনদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

ক) জামায়াতে শামিল হওয়ার পর প্রত্যেক রুকন নিজের জীবনে পরিবর্তনের জন্য যেসব বিষয়ে সর্বদা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করিবেন-

  • দ্বীন সম্পর্কে অন্তত এতটুকু জ্ঞান অর্জন করিতে হইবে যাহাতে তিনি ইসলাম ও জাহেলিয়াতের পার্থক্য বুঝতে পারিবেন এবং আল্লাহ তাৎয়ালার নির্ধারিত শরীয়তের সীমা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হইবেন।
  • নিজের ঈমান-আক্বীদা, চিন্তা-চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গি-কাজ-কর্মকে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক গড়িয়া লইবেন। নিজ জীবনের উদ্দেশ্য, মূল্যমান, পছন্দ-অপছন্দ, এবং আনুগত্যের কেন্দ্রবিন্দু সবকিছুকে আল্লাহ তা’য়ালার সন্তোষের অনুকুলে আনয়ন করিবেন এবং স্বেচ্ছাচারিতা ও আত্মপূজা পরিহার করিয়া নিজেকে সম্পূর্ণরুপে আল্লাহ তা’য়ালার বিধানের একান্ত অনুসারী ও অধীন বানাইয়া লইবেন।
  • আল্লাহ তা’য়ালার কিতাব ও রাসুল সা. এর সুন্নাতের বিপরীত সকল প্রকার জাহিলি নিয়ম-প্রথা ও রসম-রেওয়াজ এবং ‍কুসংস্কার হইতে নিজেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র করিবেন এবং ভিতর ও বাহিরকে শরীয়তের বিধান অনুযায়ী গড়িয়া তুলিতে অধিকতর প্রচেষ্টা চালাইবেন।
  • আত্মম্বরিতা ও পার্থিব স্বার্থের ভিত্তিতে যেসব হিংসা-বিদ্বেষ, ঝোক-প্রবণতা, ঝগড়া-ঝাটি ও বাক-বিতন্ডার সৃষ্টি হইয়া থাকে এবং দ্বীন ইসলামে যেসব বিষয়ের কোন গুরুত্ব নাই তাহা হইতে 자신의 অন্তর ও জীবনকে পবিত্র রাখিবেন।
  • ফাসিক ও আল্লাহ বিমূখ লোকদের সহিত দ্বীনের প্রয়োজন ব্যতিত সকল বন্ধুত্ব-ভালবাসা পরিহার করিয়া চলিবেন এবং নেক লোকদের সহিত দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করিবেন।
  • সকল কাজ আল্লাহভীতি, আল্লাহ তা’য়ালা ও রাসুল মুহাম্মদ সা. এর প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য, সততা ও ন্যায় পরায়ণতার ভিত্তিতে সম্পন্ন করিবেন।
  • নিজ পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও পারিপার্শ্বিক এলাকার লোকদের মধ্যে দ্বীনি ভাবধারা প্রচার ও প্রসার এবং দ্বীনের স্বাক্ষ্যদানের যথাসাধ্য চেষ্টা করিবেন।
  • দ্বীন ক্বায়েমের উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করিয়া সকল চেষ্টা-সাধনা নিয়ন্ত্রিত করিবেন এবং জীবন ধারনের প্রকৃত প্রয়োজন ব্যতিত এই উদ্দেশ্যর দিকে পরিচালিত করে না এমন সকল প্রকার তৎপরতা হতে নিজেকে বিরত রাখিবেন।
  • দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকিবেন।

(খ) প্রত্যেক রুকন পরিচিতদের মধ্যে এবং উহার বাইরে যেখানে পৌঁছিতে পারেন ইসলামের ঈমান ও আক্বীদা এবং জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশ্য লক্ষ্য সবিস্তারে বর্ণনা করিবেন। যাহারা এই প্রচেষ্টা চালাইবার প্রস্তুত হইবেন, তাহাদেরকে জামায়াতে ইসলামীর রুকন হওয়ার আহ্বান জানাইবেন।

ধারাঃ ১০ - মহিলা রুকনদের দায়িত্ব ও কর্তব্য‌

জামায়াতে ইসলামীর মহিলা রুকনগন তাহাদের নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের ০৯ ধারায় উল্লেখিত সকল দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করিতে হইবে। অবশ্য তাহাদিগকে নিম্নলিখিত কর্তব্যের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখিতে হইবেঃ

  • 자신의 স্বামী, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, এবং পরিচিত ও অপরিচিত অন্যান্য মহিলাদের ইসলামের পূর্ণাঙ্গ দাওয়াত পেশ করিবেন।
  • নিজের সন্তান-সন্ততির অন্তরে ঈমানের আলো সৃষ্টি করিতে এবং তাহাদিগকে ইসলামের অনুসারী বানাইতে চেষ্টা করিবেন।
  • তাঁহার স্বামী, সন্তান, পিতা ও ভাই-বোন যদি জামায়াতে শামিল হইয়া থাকেন, আন্তরিকতার সহিত তাহাদিগকে সাহসী ও আশাবাদী করিয়া তুলিবেন। জামায়াতের কাজে যথাসম্ভব তাহাদিগকে সহযোগীতা করিবেন এবং এই পথে কোন বিপদ আসিয়া পড়িলে র্ধৈয ও দৃঢ়তা অবলম্বন করিবেন।
  • তাঁহার স্বামী, পিতা-মাতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী এবং পরিবারের কোন সদস্য যদি ইসলাম পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকেন তবে ধৈর্য সহকারে তাঁহাদের সংশোধনের চেষ্টা করিবেন।

ধারাঃ ১৩ - জামায়াতের সাংগঠনিক স্তরঃ

  • কেন্দ্রীয় সংগঠন
  • জেলা/মহানগরী সংগঠন
  • উপজেলা/থানা সংগঠন
  • ইউনিয়ন/পৌরসভা সংগঠন
  • ওয়ার্ড সংগঠন
  • ইউনিট সংগঠন

ধারাঃ ১৪ - কেন্দ্রীয় সংগঠন

  1. আমীরে জামায়াত
  2. কেন্দ্রীয় রুকন সম্মেলন
  3. জাতীয় কাউন্সিল
  4. কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা
  5. কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ
  6. কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ

ধারাঃ ৬৭ - বায়তুল মালের আয়ের উৎস

  • জামায়াতের বায়তুল মালের আয়ের উৎস হইবেঃ
  • রুকন, কর্মী, সহযোগী ও সুধীদের নিকট হইতে প্রাপ্ত।
  • ক. মাসিক এয়ানত।
  • খ. যাকাত-উশর।
  • গ. এককালীন দান।
  • অধস্তন সংগঠন হইতে প্রাপ্ত নির্ধারিত মাসিক আয় ।
  • জামায়াতের নিজস্ব প্রকাশনীর মুনাফা।

ধারাঃ ৭২ - নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়

একটি পদ নির্বাচন বা নিযুক্তকালে নিম্নোক্ত গুণাবলীর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে:

  • দ্বীনি ইলম, আল্লাহভীতি, আনুগত্য, আমানতদারীতা, দেশপ্রেম, অনড় মনোবল, কর্মে দৃঢ়তা, দূরদৃষ্টি, বিশ্লেষণ শক্তি, উদ্ভাবনি শক্তি, প্রশস্তচিন্তা, সুন্দর ব্যবহার, মেজাজের ভারসাম্য, সাংগঠনিক প্রজ্ঞা, সাংহঠনিক শৃংখলা বিধানের যোগ্যতা।
  • প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন পদের জন্য আকাঙ্ক্ষিত হওয়া বা চেষ্টা করা উক্ত পদে নির্বাচিত বা নিযুক্ত হওয়ার জন্য অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে।

গঠনতন্ত্র রচনা সম্পর্কিত তথ্যঃ

  • গঠনতন্ত্র গৃহীত হয় ১৯৭৯ সনের ২৬ মে কেন্দ্রীয় রুকন সম্মেলনে।
  • গঠনতন্ত্র কার্যকর করা হয় ১৯৭৯ সনের ২৮ মে।
  • গঠনতন্ত্র প্রথম প্রকাশঃ মে ১৯৮০ ইং
  • সর্বশেষ সংশোধনীঃ ২২তম সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • সর্বশেষ প্রকাশঃ জানুয়ারী ২০২০ ইং ৮০তম মুদ্রণ।
  • মোট ধারাঃ ৭৭
  • মোট পরিশিষ্টঃ ১১

মুখস্থঃ তাওহিদ সংক্রান্ত আয়াত- আয়াতুল কুরসি (Go)

তাওহিদ সংক্রান্ত ১টি হাদীস মুখস্ত

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلاَمٍ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ عَنْ الأَعْمَشِ عَنْ زَيْدِ بْنِ وَهْبٍ وَأَبِي ظَبْيَانَ عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ يَرْحَمُ اللهُ مَنْ لاَ يَرْحَمُ النَّاسَ.

৭৩৭৬. জারীর ইবনু ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তার প্রতি রহম করেন না, যে মানুষের প্রতি রহম করে না। [৬০১৩] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭২)

মাসয়ালা: বিভিন্ন নামাজ সংক্রান্তঃ

নামাজের মাসয়ালাগুলো মূলত ফরয (বাধ্যতামূলক), ওয়াজিব (অপরিহার্য), সুন্নাত (সুন্নত) এবং নফল (ঐচ্ছিক) এই চার প্রকারের নামাজের সঙ্গে সম্পর্কিত। এর মধ্যে ফরয ও ওয়াজিব নামাজ আবশ্যকীয়, আর সুন্নাত ও নফল নামাজ আদায় করলে সওয়াব পাওয়া যায়, না করলে গুনাহ হয় না। প্রত্যেক প্রকার নামাজের নির্দিষ্ট নিয়ম, শর্ত ও পদ্ধতি রয়েছে যা মেনে নামাজ আদায় করতে হয়।

নামাজের প্রকারভেদ ও মাসয়ালা

ফরয নামাজ:

ইসলামের পাঁচটি দৈনিক ফরয নামাজ (ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব, এশা) আদায় করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক। এই নামাজগুলো নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করতে হয় এবং এগুলো বাদ দেওয়া জায়েজ নয়।

ওয়াজিব নামাজ:

ফরযের কাছাকাছি কিছু নামাজ, যেমন বিতর নামাজ, ওয়াজিব হিসেবে গণ্য হয়। এগুলোকেও নিয়মিত আদায় করতে হয়।

সুন্নাত নামাজ:

ফরয নামাজের আগে-পরে আদায় করা হয়। এটি দুই প্রকার:

  • সুন্নতে মুয়াক্কাদা (আদায় করা উচিত)
  • সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা (আদায়ে উৎসাহিত করা হয়েছে, তবে বাধ্যতামূলক নয়)

নফল নামাজ:

ঐচ্ছিক নামাজ যা ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাত ছাড়া অন্যান্য সময়ে আদায় করা হয়। যেমন: তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, জাওয়াল ও আউওয়াবিন নামাজ।

সাধারণ মাসয়ালা

  • পবিত্রতা: নামাজ আদায়ের জন্য শরীর ও কাপড় পবিত্র হওয়া এবং নামাজের স্থান পবিত্র থাকা আবশ্যক। এছাড়াও ওযু ও গোসলের মাধ্যমে অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়া জরুরি।
  • শর্ত: নামাজ শুরুর আগে কেবলামুখী হওয়া, সতর ঢাকা, নামাজের সময় হওয়া ও নিয়ত করা গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
  • ফরজ: নামাজ সহীহ হওয়ার জন্য ১৩টি ফরজ রয়েছে, যার মধ্যে ৬টি নামাজের বাইরে এবং ৭টি নামাজের ভিতরে।
  • ওয়াজিব: নামাজের ১৪টি ওয়াজিব রয়েছে যা আদায় করা উচিত, না করলে সাজদা সাহু দিতে হয়।
  • কিরাত: নফল নামাজে সাধারণত আস্তে কেরাত পড়া হয়, তবে তারাবীহ ও খুসুফ নামাজ এর ব্যতিক্রম।

গুরুত্বপূর্ণ দিক

  • জামাতের নামাজ: নফল নামাজ সাধারণত একা আদায় করা হয়, তবে জামাতে পড়ার কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে, যেমন তারাবীহ ও বেতরের নামাজ।
  • নামাজের ভুল: ইমামের ভুল হলে মুক্তাদী লোকমা দিয়ে তা সংশোধন করতে পারেন। তবে তা কখন করা হলো, তার ওপর নির্ভর করে নামাজ সহীহ হবে কি না।

নামায সংক্রান্ত মাসআলা

নামাজের মাসআলা বা নামাজের নিয়মকানুন ইসলামিক শরিয়তে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নামাজের মৌলিক বিষয়, যেমন - ওযু, কিবলামুখী হওয়া, নামাজের নিয়ত, রুকু, সিজদা, শেষ বৈঠক এবং সালাম ফেরানো সহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।

  • ওযু: নামাজের পূর্বে অবশ্যই ওযু করা ফরজ।
  • কিবলামুখী হওয়া: নামাজের জন্য কিবলামুখী হওয়া ফরজ।
  • নিয়ত: প্রত্যেক নামাজের জন্য নিয়ত করা সুন্নত।
  • রুকু: রুকুতে গিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানো ও "সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম" তিনবার পড়া সুন্নত।
  • সিজদা: সিজদার সময় কপাল, নাক, উভয় হাত, উভয় হাঁটু ও পায়ের আঙ্গুল জমিনে রাখা ফরজ।
  • শেষ বৈঠক: তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া শেষে সালাম ফেরানো হয়।
  • সালাম ফেরানো: প্রথমে ডান দিকে, পরে বাম দিকে “আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ” বলা হয়।

সালাতের ফরয (১৩ টি)

সালাত শুরুর পূর্বে ৭টি আহকাম এবং সালাতের মধ্যে ৬টি আরকান রয়েছে। এগুলোকে সালাতের ফরজ বলা হয়।

সালাতের আহকাম (৭টি)

  • শরীর পবিত্র হওয়া: গোসল, অযু বা তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন।
  • কাপড় পবিত্র হওয়া: পরিচ্ছদ পরিষ্কার রাখা। (সূরা মুদ্দাসসির: ৪)
  • জায়গা পবিত্র হওয়া: অন্তত নামাজ পড়ার স্থানের ন্যূনতম অংশ (দুই পা, দুই হাত, হাঁটু ও কপাল) পবিত্র হতে হবে।
নামাজের সাথে সাথে সুন্নত ও নফল নামাজ পড়ারও বিধান রয়েছে।

সালাতের ফরয

সালাতের ফরজ হল ১৩ টিঃ যেগুলোর কোন একটি ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিলে সালাত / নামাজ আদায় শুদ্ধ হবে না। অর্থাৎ সালাত শুরুর পূর্বে ৭টি আহকাম (أحكام) আর সালাতের মধ্যে ৬টি আরকান (اركان) রয়েছে সেগুলোকে সালাত বা নামাজের ফরজ বলা হয়।

সালাতের আহকাম ও আরকান কী?

সালাত শুরুর পূর্বের ফরজসমূহকে আহকাম, অন্যদিকে যে ফরজ কাজগুলো সালাতের মধ্যে আদায় করতে হয়, সেগুলোকে সালাতের আরকান বলা হয়। প্রথমে আমরা সালাত / নামাজের আহকাম সম্পর্কে আলোচনা করা হল:

ক) সালাতের আহকামসমূহ (أحكام):

আহকাম শব্দটি বহুবচন, একবচনে হুকুম। যে ফরজ কাজগুলো নামাজ শুরু করার আগেই করতে হয়, সেগুলোকে সালাতের আহকাম বলা হয়। সালাতের আহকাম মোট সাতটি। নিম্নে সালাত / নামাজের আহকামসূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হল:

  • ১) শরীর পবিত্র হওয়া: সালাত নামাজ আদায় করার জন্য শরীর পাক-পবিত্র হতে হবে। গোসল, অযু বা তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। শরীর পবিত্র হওয়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেন, সালাত / নামাজ আদায়কারীর শরীর পবিত্র হওয়া। (বুখারি, হাদিস নং ২৯৬)। পবিত্রতা অর্জন ছাড়া সালাত / নামাজ শুদ্ধ হবে না। (বুখারি, হাদিস নং ৬৪৪০)।
  • ২) কাপড় পবিত্র হওয়া: সালাত/ নামাজ আদায়কারীর কাপড় পবিত্র হতে হবে। অর্থাৎ কাপড় বা পোশাক পরিচ্ছদ পরিষ্কার থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন: وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ – “তোমার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখ।” (সূরা মুদ্দাসসির ৭৪:৪)।
  • ৩) জায়গা পবিত্র হওয়া: যে স্থানে সালাত পড়া হবে সেটি পবিত্র হতে হবে। ন্যূনতম স্থান হলো দুই পা, দুই হাত, হাঁটু ও কপাল রাখার জায়গা। আল্লাহ বলেন: وَطَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّآٮِٕفِيْنَ – “আমার গৃহকে পবিত্র রাখ।” (সূরা আল বাকারাহ ২:১২৫)।
  • ৪) সতর ঢেকে রাখা: নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সতর ঢাকা থাকতে হবে। পুরুষের সতর হলো নাভির উপর থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। নারীর সতর হলো মুখ, হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা ছাড়া পুরো শরীর। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ২/৪৫১, বাদায়ে ১/৪৭৭)।
  • ৫) কিবলা মুখী হওয়া: কাবার দিকে মুখ করে নামাজ পড়া ফরজ। আল্লাহ বলেন: فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ – “মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও।” (সূরা আল বাকারাহ ২:১৪৯-১৫০)।
  • ৬) ওয়াক্ত অনুযায়ী সালাত আদায় করা: সালাতের ওয়াক্ত না হলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। আল্লাহ বলেন: إِنَّ الصَّلٰوةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتٰبًا مَّوْقُوْتًا – “নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।” (সূরা আন নিসা ৪:১০৩)।

সালাতের সময়

  • ১. ফজরের নামাজের সময়: সুবেহ সাদেক (পূর্বদিগন্তে শুভ্রতা দেখা যাওয়া) থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত।
  • ২. যোহরের সময়: সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে প্রতিটি জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত।
  • ৩. আসরের সময়: যোহরের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
  • ৪. মাগরিবের সময়: সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে শফকে আহমার শেষ হওয়া পর্যন্ত। শফকে আহমার হলো সূর্যাস্তের সময় পশ্চিম আকাশে যে লাল আভা থাকে।
  • ৫. এশার সময়: মাগরিবের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে সুবেহ সাদেক হওয়া পর্যন্ত। কিছু ইমামদের মতে এশার সময় মধ্যরাতে শেষ হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “এশার নামাজের সময় মধ্যরাত পর্যন্ত।” (মুসলিম)।

বর্তমান যুগে ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে নামাজের সময় সহজেই নির্ণয় করা যায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “যে ব্যক্তি নামাজের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পূর্বে মাত্র এক রাকাত নামাজ পেল, সে ওই নামাজ পেয়ে গেল।” (বুখারী ও মুসলিম)। তিনি আরও বলেন: “যে ব্যক্তি কোনো নামাজ ভুলে গেল, ¯রণ হলে তা আদায় করে নেবে।” (বুখারী ও মুসলিম)।

সালাতের মাকরূহ সময়

সালাত / নামাজের মাকরূহ সময় তিনটি, অর্থাৎ এই সময়গুলোতে নামাজ পড়া নিষেধ:

  • ১) সূর্যোদয়ের পর থেকে এশরাকের আগ পর্যন্ত: সূর্য উঠার শুরু থেকে হলুদ আলো পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত সময়। ফকিহদের মতে সূর্য ওঠার পর প্রায় ২০ মিনিট পর্যন্ত নামাজ পড়া যাবে না।
  • ২) সূর্য যখন মাথার ওপরে: সূর্য যখন ঠিক মাথার ওপরে থাকে তখন নামাজ পড়া নিষেধ। আরবিতে একে ‘জাওয়াল’ বলা হয়। সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়লেই জোহরের সময় শুরু হয়। সতর্কতার জন্য সূর্য মাথার ওপরে উঠার পাঁচ মিনিট আগে ও পাঁচ মিনিট পর পর্যন্ত নামাজ থেকে বিরত থাকা উত্তম।
  • ৩) সূর্য ডোবার সময়: সূর্য যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে ডুবতে শুরু করে অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত সময়। সাহাবি উকবা বিন আমের আল জুহানি (রাঃ) বর্ণনা করেন: “রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের তিন সময়ে নামাজ ও মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করেছেন— সূর্য উঠার সময়, সূর্য যখন মাথার ওপরে, এবং সূর্য ডোবার সময়।” (বুখারী ৫৫১, মুসলিম ১১৮৫)।

এ তিন সময় নামাজ পড়া নিষেধ হওয়ার কারণ হলো, সূর্য পূজারিরা এই সময়ে সূর্যকে সেজদাহ করত। তাহলে মুসলিমদের নামাজ তাদের অনুকরণ বলে মনে হতে পারে। তাই শরিয়ত এই সময়ে সব ধরনের সালাত ও সেজদাহ নিষিদ্ধ করেছে। মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানাভী (রহ.) বলেন: “এ তিন সময়ে নামাজ তো দূরের কথা, এমনকি তিলাওয়াতে সেজদাহ করাও নিষেধ। জানাজার নামাজ ও দাফনও নিষেধ। তবে জরুরি হলে জানাজা পড়ানো ও দাফন করা যাবে।”

নিয়ত করা: সালাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত

নিয়ত ছাড়া সালাত বা নামাজ সহিহ হবে না। ফরজ সালাত হলে কোন সময়ের সালাত, তা নির্দিষ্ট করা আবশ্যক। যেমন -যুহরের অথবা আসরের সালাত। সেরূপ ওয়াজিব নামাজ হলে তাও নির্দিষ্ট করা জরুরি, যেমন সালাতুল বিতর বা সালাতুল ঈদ ইত্যাদি।

কিন্তু নফল সালাতে নির্দিষ্ট করে নিয়ত করার প্রয়োজন নেই। তখন শুধু সালাতের নিয়ত করলেই হবে। কেননা ফরজ ও ওয়াজিব সালাত সালাতের সময় বা প্রকার হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন, তাই তা নির্দিষ্ট করে নিয়ত করতে হয়। (বুখারি, হাদিস নং ১, আল আশবাহ: ১/৪৩)।

জামাতে সালাত হলে মুক্তাদিদের ইমামের অনুসরণের নিয়ত করা আবশ্যক। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কুরআন আল কারীমে বলেন:

وَ مَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوا اللّٰهَ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَ ۬ۙ حُنَفَآءَ وَ یُقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوا الزَّكٰوۃَ وَ ذٰلِكَ دِیۡنُ الۡقَیِّمَۃِ ؕ﴿۵
তাহারা তো আদিষ্ট হইয়াছিল আল্লাহ্র আনুগত্যে বিশুদ্ধ চিত্ত হইয়া একনিষ্ঠ ভাবে তাঁহার ইবাদত করিতে এবং সালাত কায়েম করিতে ও যাকাত দিতে, ইহাই সঠিক দ্বীন।

(সূরা আল বাইয়্যিনাহ, সূরা নম্বর: ৯৮, আয়াত নম্বর: ৫)

খ) সালাতের আরকানসমূহ (اركان)ঃ

যে ফরজ কাজগুলো সালামের মধ্যে আদায় করতে হয়, সেগুলোকে সালাতের আরকান বলা হয়। সালাত / নামাজের আরকান ৬ টি। সেগুলো হল:
১) তাকবিরে তাহরিমা বা আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করা:
তাহরীমা অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহর জিকির দ্বারা নামাজ আরম্ভ করা। যেমন আল্লাহু আকবার। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১/২৩৮)। নিয়ত আর তাকবিরে তাহরীমার মাঝে কোনো অন্য কাজ না করা। যেমন খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি। (আল আশবাহ ১/৫৮)। তাহরিমার ব্যাপারে শর্ত হলো, তা রুকুর জন্য ঝুঁকে পড়ার আগে দাঁড়ানো অবস্থায় করা। (বুখারি, হাদিস নং ৭১৫)। আর নিয়ত তাকবিরে তাহরিমার পরে না করা। (বুখারি, হাদিস নং ৭১৫)
তাকবির আল্লাহু আকবার এমনভাবে বলা, যাতে নিজে শুনতে পায়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুরআন আল কারীমে বলেন,
( وَرَبَّكَ فَكَبِّرْۙ ) এবং তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। (সূরা মুদ্দাসসির, সূরা নাম্বারঃ ৭৪, আয়াত নাম্বারঃ ৩)
মূলতঃ তাকবীরে তাহরীমা (অর্থাৎ প্রথম তাকবীর) নামাযের শর্তসমূহের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু নামাযের আভ্যন্তরিন কার্যাবলীর সাথে সম্পূর্ণরূপে সম্পৃক্ত, তাই সেটিকে নামাযের ফরয সমূহের মধ্যেও গণ্য করা হয়েছে। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৫৩ পৃষ্ঠা)
  • (ক) মুক্তাদী -তাকবীরে তাহরীমা” এর শব্দ أَلله ইমামের সাথে বললো, কিন্তু اَكْبَر ইমামের পূর্বে শেষ করে নিলো তবে তার নামায হবে না। (ফাতওয়া ই আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৮ পৃষ্ঠা)
  • (খ) ইমামকে রুকূতে পেল, আর সে তাকবীরে তাহরীমা বলতে বলতে রুকূতে গেলো অর্থাৎ তাকবীর এমন সময় শেষ হলো যে, হাত বাড়ালে হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে যাবে, এমতাবস্থায় তার নামায হবে না। (খুলাসাতুল ফতোওয়া, ১ম খন্ড, ৮৩ পৃষ্ঠা) (অর্থাৎ এ সময় ইমামকে রুকূতে পাওয়া অবস্থায় নিয়মানুযায়ী প্রথমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে নিন এরপর أَللهُ اَكْبَر বলে রুকূ করুন। ইমামের সাথে যদি সামান্যতম মুহুর্তের জন্যও রুকূতে অংশগ্রহণ করতে পারেন তবে আপনার রাকাত মিলে গেলো আর যদি আপনি রুকূতে যাওয়ার পূর্বেই ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে যান তবে রাকাত পাওয়া হলো না।
  • (গ) যে ব্যক্তি তাকবীর উচ্চারণে সক্ষম নয় যেমন- বোবা বা অন্য যে কোন কারণে যার বাকশক্তি বন্ধ হয়ে গেছে, তার জন্য মুখে তাকবীর উচ্চারণ করা আবশ্যক নয়, তার অন্তরের ইচ্ছাই যথেষ্ট। (তাবঈনুল হাকাইক, ১ম খন্ড, ১০৯ পৃষ্ঠা)
  • (ঘ) اَلله শব্দকে اٰلله অর্থাৎ আলিফকে টেনে বা اَكْبَر কে اٰكْبَر অর্থাৎ আলিফকে টেনে বা اَكْبَر কে اَكْبَار অর্থাৎ ب কে টেনে পড়লো তবে নামায হবে না বরং যদি এগুলোর ভুল অর্থ জেনে বুঝে বলে তবে সে কাফির হয়ে যাবে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৭৭ পৃষ্ঠা) নামাযীর সংখ্যা বেশি হওয়া অবস্থায় পিছনে আওয়াজ পৌঁছানোর জন্য যেসব মুকাব্বিরগণ তাকবীর বলে থাকেন, সেসব মুকাব্বিরদের অধিকাংশই জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে আজকাল اكْبَرْ কে اَكْبَار অর্থাৎ اْ কে দীর্ঘ টান দিয়ে বলতে শুনা যায়। এর ফলে তাদের নিজের নামাযও ভঙ্গ হয়ে যায় এবং তার আওয়াজে সে সব লোক নামাযের রুকন আদায় করে (অর্থাৎ কিয়াম থেকে রুকূতে যায়, রুকূ থেকে সিজদাতে যায় ইত্যাদি) তাদের নামাযও ভঙ্গ হয়ে যায়। এ জন্য না শিখে কখনো মুকাব্বির হওয়া উচিত নয়।
  • (ঙ) প্রথম রাকাতের রুকূ পাওয়া গেলো, তাহলে ‘তাকবীরে ঊলা’ বা প্রথম তাকবীরের সাওয়াব পেয়ে গেলো। (ফাতওয়া ই আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা)
২) কিয়াম বা দাঁড়িয়ে সালাত নামাজ আদায় করা:
নারী এবং পুরুষ উভয়কে দাঁড়িয়ে সালাত / নামাজ আদায় করতে হবে। তবে অসুস্থ হলে বসে এবং বসতে অক্ষম হলে শুয়ে ইশারায় সালাত পড়তে হবে। কিয়ামের বিষয়ে বিস্তারিত বলা যায়
  • (ক) কিয়ামের নিম্নতম সীমা হচ্ছে যে, হাত বাড়ালে হাত যেন হাঁটু পর্যন্ত না পৌঁছে আর পূর্ণাঙ্গ কিয়াম হচ্ছে সোজা হয়ে দাঁড়ান। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৬৩ পৃষ্ঠা)
  • (খ) ততটুকু সময় পর্যন্ত কিয়াম করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত কিরাত পাঠ করা হবে। যতটুকু পরিমাণ কিরাত পড়া ফরয ততটুকু পরিমাণ দাঁড়ানোও ফরয। যতটুকু পরিমাণ ওয়াজীব ততটুকু পরিমাণ কিরাত ওয়াজীব এবং যতটুকু পরিমাণ কিরাত সুন্নাত ততটুকু পরিমাণ দাঁড়ান সুন্নাত। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৬৩ পৃষ্ঠা)
  • (গ) ফরয, বিতর, দুই ঈদ এবং ফযরের সুন্নাতে দাঁড়ানো ফরয। যদি সঠিক কারণ (ওজর) ব্যতীত কেউ এসব নামায বসে বসে আদায় করে, তবে তার নামায হবে না। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৬৩ পৃষ্ঠা)
  • (ঘ) দাঁড়াতে শুধু একটু কষ্টবোধ হওয়া কোন ওযরের মধ্যে পড়ে না বরং কিয়াম ঐ সময় রহিত হবে যখন মোটেই দাঁড়াতে পারে না অথবা সিজদা করতে পারে না অথবা দাঁড়ানোর ফলে বা সিজদা করার কারণে ক্ষতস্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত হয় অথবা দাঁড়ানোর ফলে প্রস্রাবের ফোটা চলে আসে অথবা এক চর্তুাংশ সতর খুলে যায় কিংবা কিরাত পড়তে যতক্ষণ সময় লাগে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে অক্ষম হয়। এমনি দাঁড়াতে পারে কিন্তু তাতে রোগ বৃদ্ধি পায় বা দেরীতে সুস্থ হয় বা অসহ্য কষ্ট অনুভব হয় তাহলে এ সকল অবস্থায় বসে পড়ার অনুমতি রয়েছে। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৫৮ পৃষ্ঠা)
  • (ঙ) যদি লাঠি দ্বারা খাদিমের সাহায্যে বা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয় তবে এ অবস্থায়ও দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা ফরয। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৫৮ পৃষ্ঠা)
  • (চ) যদি শুধুমাত্র এতটুকু দাঁড়াতে পারে যে, কোন মতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলতে পারবে তবে তার জন্য ফরয হচ্ছে দাঁড়িয়ে “ ْ” বলা। এরপর যদি দাঁড়ানো সম্ভব না হয় তাহলে বসে বসে নামায আদায় করা। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৫৯ পৃষ্ঠা)
  • (ছ) সাবধান! কিছু লোক সামান্য কষ্টের (আঘাতের) কারণে ফরয নামায বসে আদায় করে, তারা যেন শরীয়াতের এ আদেশের প্রতি মনোযোগ দেয় যে, দাঁড়িয়ে আদায় করার শক্তি থাকা সত্ত্বেও যত ওয়াক্ত নামায বসে বসে আদায় করা হয়েছে সবগুলো পুনরায় আদায় করে দেওয়া ফরয। অনুরূপভাবে এমনি দাঁড়াতে পারে না, তবে লাঠি বা দেয়াল কিংবা মানুষের সাহায্যে দাঁড়ানো সম্ভব ছিলো কিন্তু বসে বসে পড়েছে তাহলে তাদের নামাযও হয়নি। তা পুনরায় পড়ে নেয়া ফরয। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ৬৪ পৃষ্ঠা) ইসলামী বোনদের জন্যও একই আদেশ। তারাও শরীয়াতের অনুমতি ব্যতীত বসে বসে নামায আদায় করতে পারবে না। অনেক মসজিদে বসে নামায আদায় করার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক বৃদ্ধলোক দেখা গেছে এতে বসে ফরয নামায আদায় করে থাকে, অথচ তারা পায়ে হেঁটে মসজিদে এসেছে, নামাযের পর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথাবার্তাও বলে, এমন সব বৃদ্ধ লোক যদি শরীয়াতের অনুমতি ব্যতীত বসে নামায আদায় করে থাকে তবে তাদের নামায হবে না।
  • (জ) দাঁড়িয়ে নামায আদায় করার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও নফল নামায বসে আদায় করতে পারবে, তবে দাঁড়িয়ে আদায় করা উত্তম। যেমনিভাবে- হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আমর رضى الله عنه থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ্ ইরশাদ করেন: বসে নামায আদায়কারী দাঁড়িয়ে আদায়কারীর অর্ধেক (অর্থাৎ অর্ধেক সাওয়াব পাবে) । (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ২৫৩ পৃষ্ঠা) অবশ্য অসুবিধার (অক্ষমতার) কারণে বসে পড়লে সাওয়াবে কম হবে না। বর্তমানে সাধারণভাবে দেখা যাচ্ছে.
৩) কিরাত পড়াঃ
কুরআন আল কারীমের কিছু অংশ পাঠ করা। কিরাত পড়া বিষয়ে বিস্তারিত বলা যায়
  • (ক) কিরাত হলো, সমস্ত অক্ষরসমূহ তার মাখরাজ (উচ্চারণের স্থান থেকে) আদায় করার নাম, যেন প্রত্যেক অক্ষর অন্য অক্ষর থেকে পৃথকভাবে বুঝা যায় ও উচ্চারণও বিশুদ্ধ হয়। (ফাতওয়া ই আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা)
  • ((খ) নীরবে পড়ার ক্ষেত্রে এতটুকু আওয়াজে পড়া আবশ্যক যে, যেন নিজে শুনতে পায়। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৭১ পৃষ্ঠা)
  • ((গ) আর যদি অক্ষরগুলো বিশুদ্ধভাবে উচ্চারণ করেছে, কিন্তু এত নিম্নস্বরে পড়েছে যে, নিজের কানেও শুনেনি অথচ এ সময় কোন অন্তরায় যেমন হৈ চৈও ছিলো না, আবার কান ভারী (অর্থাৎ বধির)ও নয় তবে তার সালাত / নামায হলো না। (ফাতওয়া ই আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা)
  • ((ঘ) যদিও নিজে শুনাটা জরুরী তবে এটার প্রতিও এতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক যে, নীরবে কিরাত পড়ার নামাযগুলোতে যেন কিরাতের আওয়াজ অন্যজনের কানে না পৌঁছে, অনুরূপভাবে তাসবীহ সমূহ আদায় কালেও এ বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখা উচিত।
  • ((ঙ) নামায ব্যতীত যেসব স্থানে কিছু বলা বা পড়াটা নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানেও এর দ্বারা এটা উদ্দেশ্য যে, কমপক্ষে এমন আওয়াজ হয় যেন নিজে শুনতে পায়। যেমন ্ তালাক দেয়া, গোলাম আযাদ করা অথবা জন্তু যাবেহ করার জন্য আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া ত্আালার নাম নেয়া। এসব ক্ষেত্রে এতটুকু আওয়াজ আবশ্যক যেন নিজের কানে শুনতে পায়। (ফাতওয়া ই আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা) দরূদ শরীফ ইত্যাদি ওযীফা সমূহ পড়ার ক্ষেত্রে কমপক্ষে এতটুকু আওয়াজ হওয়া উচিত যেন নিজে শুনতে পায়, তবেই পাঠ করা হিসেবে গণ্য হবে।
  • ((চ) শুধুমাত্র বড় এক আয়াত পাঠ করা ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাতে ফরয, আর বিতর, সুন্নাত ও নফলের প্রত্যেক রাকাতে ইমাম ও একাকী নামায আদায়কারী সকলের উপর ফরয। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাক্বিউল ফালাহ, ২২৬ পৃষ্ঠা)
  • ( (ছ) মুক্তাদির জন্য নামাযে কিরাত পড়া জায়েয নেই। না সূরায়ে ফাতিহা, না অন্য আয়াত, না নীরবে কিরাতের নামাযে, না উঁচু আওয়াজের কিরাতের নামাযে। ইমামের কিরাতই মুক্ততাদীর জন্য যথেষ্ট। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাকিউল ফালাহ, ২২৭ পৃষ্ঠা)
  • ( (জ) ফরয নামাযের কোন রাকাতে কিরাত পড়লো না বা শুধু এক রাকাতে পড়লো তবে নামায ভঙ্গ হয়ে গেলো। (ফাতওয়া ই আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা)
  • ((ঝ) ফরয নামাযগুলোতে ধীরে ধীরে, তারাবীতে মধ্যম গতিতে ও রাতের নফল নামাযে তাড়াতাড়ি কিরাত পড়ার অনুমতি রয়েছে। তবে এমনভাবে পড়তে হবে যেন কিরাতের শব্দ সমূহ বুঝে আসে অর্থাৎ কমপক্ষে মদের (দীর্ঘ করে পড়ার) যতটুকু সীমা কারীগণ নির্ধারণ করেছেন ততটুকু যেন আদায় হয়, নতুবা হারাম হবে। কেননা তারতীল (অর্থাৎ থেমে থেমে) সহকারে কুরআন তিলাওয়াতের আদেশ রয়েছে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ৩৬৩ পৃষ্ঠা) বর্তমানে অধিকাংশ হাফিয সাহেবগণ এভাবে পড়ে থাকেন যে, মদ সমূহের আদায়তো দূরের কথা আয়াতের শেষের দু’একটি শব্দ যেমন- يَعْلَمُوْن/ تَعْلَمُوْن ছাড়া বাকী কোন শব্দই বুঝা যায় না। এক্ষেত্রে অক্ষরসমূহের উচ্চারণ শুদ্ধ হয় না বরং দ্রুত পড়ার কারণে অক্ষরগুলো একটি অপরটির সঙ্গে সংমিশ্রণ হয়ে যায় আর এভাবে দ্রুত পড়ার কারণে গর্ববোধ করা হয় যে, অমূখ হাফিয সাহেব খুব তাড়াতাড়ি পড়ে থাকেন! অথচ এভাবে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা হারাম ও শক্ত হারাম। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৮৬, ৮৭ পৃষ্ঠা)
৪) রুকূ করাঃ
এতটুকু ঝুঁকা যাতে হাত বাড়ালে হাত উভয় হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে যায়, এটা রুকূর নিম্নতম পর্যায়। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা) আর পূর্ণাঙ্গ রুকূ হচ্ছে পিঠকে সমান করে সোজাসুজি বিছিয়ে দেয়া। (তাহতাবীর পাদটিকা, ২২৯ পৃষ্ঠা) , রাসূলুল্লাহ্ বলেন, “আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া ত্আালা বান্দার ঐ নামাযের প্রতি দৃষ্টি দেন না, যাতে রুকূ ও সিজদা সমূহের মাঝখানে পিঠ সোজা করা হয় না।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, হাদীস নং ১০৮০৩)
৫) সিজদা করাঃ
  • (ক) নবী করীম ﷺ বলেন, আমাকে হুকুম করা হয়েছে সাতটি হাঁড় দ্বারা সিজদা করার জন্য। ঐ সাতটি হাড় হলো মুখ (কপাল) ও উভয় হাত, উভয় হাঁটু এবং উভয় পায়ের পাতা আরও হুকুম হয়েছে যে, কাপড় ও চুল যেন সংকুচিত না করি।” (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ১৯৩ পৃষ্ঠা)
  • (খ) প্রত্যেক রাকাতে দুইবার সিজদা করা ফরয। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৬৭ পৃষ্ঠা)
  • (গ) সিজদাতে কপাল জমিনের উপর ভালভাবে স্থাপন করা আবশ্যক। ভালভাবে স্থাপনের অর্থ হচ্ছে; জমিনের কাঠিন্যতা ভালভাবে অনুভূত হওয়া। যদি কেউ এভাবে সিজদা করে যে, কপাল ভালভাবে জমিনে স্থাপিত হয়নি তাহলে তার সিজদা হয়নি। (ফাতওয়া ই আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৭০ পৃষ্ঠা)
  • (ঘ) কেউ কোন নরম বস্তু যেমন ঘাস (বাগানের সতেজ ঘাস), তুলা অথবা কার্পেট ইত্যাদির উপর সিজদা করলো, যদি এমতাবস্থায় কপাল ভালভাবে স্থাপিত হয় অর্থাৎ কপালকে এতটুকু চাপ দিলো যে, এরপর আর চাপা যায় না, তাহলে তার সিজদা হয়ে যাবে, অন্যথায় হবে না। (তাবঈনুল হাকাইক, ১ম খন্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা)।
৬) শেষ বৈঠকে বসাঃ
শেয বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ, দোয়া মাছুরা পড়ে সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করা হয় তাকেই বলে শেষ বৈঠক। ডানে ও বামে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করা। একে কা’দায়ে আখিরা বলা হয়।
শেষ বৈঠকে বসা (যে বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ, দোয়া মাছুরা পড়ে সালামের মাধ্যমে সালাত / নামাজ শেষ করা হয় তাকেই বলে শেষ বৈঠক) ডানে ও বামে সালাম ফিরিয়ে সালাত / নামাজ শেষ করা। অর্থাৎ নামাযের রাকাত সমূহ পূর্ণ করার পর সম্পূর্ণ তাশাহহুদ অর্থাৎ (আততাহিয়াত) পর্যন্ত পড়তে যত সময় লাগে এতক্ষণ পর্যন্ত বসা ফরয। (ফাতওয়া ই আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৭০ পৃষ্ঠা)
চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে চতুর্থ রাকআতের পর কেউ ভুলে কা’দা করলো না, তাহলে পঞ্চম রাকাতের সিজদা না করা পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে যখনই মনে পড়বে তৎক্ষণাৎ বসে যাবে আর যদি পঞ্চম রাকাতের সিজদা করে ফেলে অথবা ফজরের নামাযে দ্বিতীয় রাকাতে বসলো না তৃতীয় রাকাতের সিজদা করে নিলো কিংবা মাগরিবে তৃতীয় রাকাতে না বসে চতুর্থ রাকাতের সিজদা করে নিলো, তবে এসব অবস্থায় ফরয বাতিল হয়ে যাবে। মাগরিব ব্যতীত অন্যান্য নামাযে আরো এক রাকাত মিলিয়ে নামায শেষ করবেন। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৮৪ পৃষ্ঠা)
খুরুজে বিসুনইহী (সালামের মাধ্যমে সালাত / নামাজ শেষ করা)ঃ
অর্থাৎ কা’দায়ে আখিরাহ্ এরপর সালাম বা কথাবার্তা ইত্যাদি এমন কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে করা যা নামায ভঙ্গ করে দেয়। তবে সালাম ব্যতীত অন্য কোন কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে করে নামায শেষ করলে ঐ নামায পুনরায় আদায় করে দেয়া ওয়াজীব। আর যদি অনিচ্ছাকৃত ভাবে এ ধরণের কোন কাজ করা হয় তবে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৮৬ পৃষ্ঠা)।
পরিশেষে বলা যায় আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর প্রিয় রাসূল কে যেভাবে সালাত / নামাজ আদায় করার শিক্ষা দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ্ ﷺ যেভাবে সালাত / নামাজ আদায় করেছেন তাঁর প্রিয় সাহাবায়ে কেরামদের সালাত / নামাজ আদায় করা শিখিয়েছেন আমরা সকলেই যেন সেভাবে খুশু খুযুর সাথে সালাত / নামাজ আদায় করতে পারি, আমীন।

Top

অনুশীলনী -০২: (জানুয়ারী-৩য় সপ্তাহঃ)

# দারস তৈরী - সূরা যিলযাল # বই নোট: সংগঠন পদ্ধতি # তাওহিদ সংক্রান্ত আয়াত # তাওহিদ সংক্রান্ত হাদিস # নামাজের প্রকারভেদ ও মাসয়ালা

দারস তৈরী - সূরা যিলযালঃ

إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا
(১) যখন পৃথিবী তার চূড়ান্ত কম্পনে প্রকম্পিত হবে,
وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا
(২) যখন ভূগর্ভ তার বোঝাসমূহ বের করে দেবে,
وَقَالَ الْإِنْسَانُ مَا لَهَا
(৩) এবং মানুষ বলবে, এর কি হ’ল?
يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا
(৪) সেদিন পৃথিবী তার সকল বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে।
بِأَنَّ رَبَّكَ أَوْحَى لَهَا
(৫) কেননা তোমার পালনকর্তা তাকে প্রত্যাদেশ করবেন।
يَوْمَئِذٍ يَصْدُرُ النَّاسُ أَشْتَاتًا لِيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ
(৬) সেদিন মানুষ বিভিন্ন দলে প্রকাশ পাবে, যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সমূহ দেখানো যায়।
فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ
(৭) অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা সে দেখতে পাবে।
وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ (৮) আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও সে দেখতে পাবে।

বিষয়বস্তু : সূরাটির মূল বিষয়বস্তু হ’ল ক্বিয়ামত অনুষ্ঠান। যা দু’টি ভাগে আলোচিত হয়েছে। প্রথমভাগে ক্বিয়ামত অনুষ্ঠানের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে (১-৫ আয়াত)।
দ্বিতীয়ভাগে বলা হয়েছে যে, মানুষকে ঐদিন স্ব স্ব আমলনামা দেখানো হবে। অতঃপর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচারের মাধ্যমে তার যথাযথ প্রতিদান দেওয়া হবে (৬-৮ আয়াত)।
গুরুত্ব :
(১) সূরাটিতে ক্বিয়ামত প্রাক্কালের চূড়ান্ত ভূকম্পনের ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে এবং মানুষকে অণু পরিমান সৎকর্ম হ’লেও তা করতে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
(২) কবি ফারাযদাক্ব -এর চাচা (বরং দাদা) ছা‘ছা‘আহ বিন মু‘আবিয়া রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে এলেন। অতঃপর তিনি তাঁকে সূরা যিলযাল পুরাটা শুনিয়ে দিলেন। শেষে পৌঁছে গেলে তিনি বলে উঠলেন, حَسْبِى لاَ أُبَالِى أَنْ لاَ أَسْمَعَ غَيْرَهَا ‘যথেষ্ট! এটা ব্যতীত কুরআনের আর কিছু না শুনলেও চলবে’।[১]
(৩) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এল। অতঃপর বলল, أَقْرِئْنِى يَا رَسُولَ اللهِ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে কুরআন শিক্ষা দিন’। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি ‘আলিফ লাম রা’ বিশিষ্ট সূরা সমূহের তিনটি পাঠ কর। লোকটি বলল, আমার বয়স বেশী হয়ে গেছে, হৃদয় শক্ত হয়ে গেছে, জিহবা মোটা হয়ে গেছে। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘হা-মীম’ বিশিষ্ট সূরা পড়। লোকটি আগের মতই বলল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তাহ’লে ‘মুসাব্বিহাত’ থেকে তিনটি পড়। লোকটি আগের মতই বলল। অতঃপর বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে একটি ব্যাপক অর্থপূর্ণ সূরা (سُوْرَةٌ جَامِعَةٌ) শিক্ষা দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে সূরা যিলযাল পাঠ করে শুনালেন। ক্বিরাআত শেষ হ’লে লোকটি বলল, وَالَّذِى بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لاَ أَزِيدُ عَلَيْهَا أَبَداً ‘যে মহান সত্তা আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি, আমি এর উপরে মোটেই বৃদ্ধি করব না’। অতঃপর লোকটি পিঠ ফিরে চলে যেতে থাকল। তখন রাসূল (ছাঃ) দু’বার বললেন, أَفْلَحَ الرُّوَيْجِلُ ‘লোকটি সফলকাম হ’ল’।[২] অতঃপর বললেন, عَلَىَّ بِهِ ‘ওকে আমার কাছে ডেকে আনো’। লোকটিকে ফিরিয়ে আনা হ’ল। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, أُمِرْتُ بِيَوْمِ الأَضْحَى جَعَلَهُ اللهُ عِيداً لِهَذِهِ الأُمَّةِ ‘আমি ঈদুল আযহা সম্পর্কে আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ এদিনকে এ উম্মতের জন্য ঈদ হিসাবে নির্ধারিত করেছেন’। লোকটি বলল, হে রাসূল! আমি যদি ছোট একটি মাদী বকরীছানা ব্যতীত কিছুই না পাই, তাহ’লে আমি কি সেটাকে কুরবানী করব? রাসূল (ছাঃ) বললেন, না। বরং তুমি وَلَكِنْ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِكَ وَتُقَلِّمُ أَظْفَارَكَ وَتَقُصُّ شَارِبَكَ وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ فَذَلِكَ تَمَامُ أُضْحِيَتِكَ عِنْدَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ ‘তোমার চুল-নখ কাটো, গোফ ছাটো, গুপ্তাঙ্গের লোম ছাফ কর, এটাই তোমার জন্য আল্লাহর নিকটে পূর্ণাঙ্গ কুরবানী হবে’।[৩]
(৪) আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) বলেন, সূরা যিলযাল নাযিল হ’লে আবুবকর (রাঃ) কাঁদতে থাকেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, لَوْلا أنَّكُمْ تُذْنِبُوْنَ لَخَلَقَ اللهُ خَلْقًا يُذْنِبُوْنَ وَيَغْفرُ لَهُمْ ‘যদি তোমরা পাপ’ না হ’তে, তাহ’লে অবশ্যই আল্লাহ আরেকটি সম্প্রদায় সৃষ্টি করতেন, যারা পাপী হ’ত এবং তিনি তাদের ক্ষমা করতেন’।[৪]
(৫) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অত্র সূরার শেষ দু’টি আয়াতকে একত্রে الآيَةُ الْفَاذَّةُ الْجَامِعَةُ ‘অনন্য ও সারগর্ভ আয়াত’ বলে অভিহিত করেছেন।[৫]
তাফসীর :
(১) إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا ‘ যখন পৃথিবী তার চূড়ান্ত কম্পনে প্রকম্পিত হবে’।
زَلْزَلَ يُزَلْزِلُ زَلْزَلَةً زِلْزَالاً وَزَلزالاً ‘ভূমিকম্প হওয়া’। অর্থাৎ حرَّكت الأرض من أصلها পুরা পৃথিবী জড়শুদ্ধ প্রচন্ডভাবে কেঁপে উঠবে (কুরতুবী)। আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ- يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللهِ شَدِيْدٌ- ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর বিষয়’। ‘যেদিন তোমরা তা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করবে। যেদিন প্রত্যেক স্তন্যদায়িনী মা তার দুগ্ধপানকারী সন্তান থেকে উদাসীন হবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভ খালাস করে ফেলবে। আর মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল সদৃশ। যদিও সে মাতাল নয়। বস্ত্ততঃ আল্লাহর শাস্তি অতীব কঠিন’ (হজ্জ ২২/১-২)। এটি ইস্রাফীলের শিঙ্গায় ফুঁকদানের পরের ঘটনা। যেমন আল্লাহ বলেন, يَوْمَ تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ، تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ ‘যেদিন কম্পিত করবে কম্পিতকারী’। ‘যার পিছে পিছে আসবে আরেকটি নিনাদ’ (নাযে‘আত ৭৯/৬-৭)। প্রথম নিনাদকে نفخة صعق ‘কম্পনের নিনাদ’ এবং দ্বিতীয় নিনাদকে نفخة بعث বা ‘পুনরুত্থানের নিনাদ’ বলা হয়। প্রথম নিনাদে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে নতুন পৃথিবী হবে। অতঃপর দ্বিতীয় নিনাদের পরেই আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হবে। তাতে মৃতরা সব জীবিত হয়ে উঠে যাবে। দুই নিনাদের মাঝে সময়ের ব্যবধান হবে চল্লিশ। সেটি দিন, মাস না বছর, সে বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) বলতে অস্বীকার করেন’।[৬] পরবর্তী আয়াতের বক্তব্যের আলোকে অত্র আয়াতের অর্থ দ্বিতীয় কম্পনের বলে অনুমিত হয়।

(২) وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا ‘যখন ভূগর্ভ তার বোঝাসমূহ বের করে দেবে’।
অর্থাৎ কবরবাসীরা সবাই জীবিত হয়ে বের হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, ثُمَّ نُفِخَ فِيْهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَّنْظُرُوْنَ ‘অতঃপর পুনরায় শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। তখন সবাই উঠে দাঁড়িয়ে যাবে ও দেখতে থাকবে’ (যুমার ৩৯/৬৮)। আল্লাহ বলেন, يَوْمَ يَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‘যেদিন মানুষ বিশ্বপালকের সামনে দাঁড়িয়ে যাবে’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/৬)। আল্লাহ আরও বলেন, وَإِذَا الْأَرْضُ مُدَّتْ، وَأَلْقَتْ مَا فِيْهَا وَتَخَلَّتْ ‘যেদিন পৃথিবী প্রসারিত হবে’। ‘এবং তার ভিতরকার সবকিছু বাইরে নিক্ষেপ করবে ও খালি হয়ে যাবে’ (ইনশিক্বাক্ব ৮৪/৩-৪)। এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, ভূগর্ভে বহু সোনা-দানা খনি আকারে মানুষের জন্য সঞ্চিত রাখা হয়েছে যা উত্তোলন করে জনকল্যাণে ব্যয় করা মানুষের যরূরী কর্তব্য। যেমন হাদীছেও এ বিষয়ে বক্তব্য এসেছে যে, ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে تَقِىءُ الأَرْضُ أَفْلاَذَ كَبِدِهَا أَمْثَالَ الأُسْطُوَانِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ ‘পৃথিবী উগরে দিবে ভূগর্ভে সঞ্চিত মূল্যবান স্বর্ণ-রৌপ্যসমূহ, যা বড় বড় স্তম্ভের মত’।[৭] অর্থাৎ কবর সমূহ থেকে মানুষ এবং ভূগর্ভ থেকে অন্যান্য সবকিছু বের করে দেওয়া হবে।

(৩) وَقَالَ الْإِنْسَانُ مَا لَهَا ‘এবং মানুষ বলবে, এর কি হ’ল’?
অর্থাৎ পৃথিবীর এই ভয়ংকর পরিবর্তিত অবস্থা দেখে বিশেষ করে কাফেররা ভীতবিহবল হয়ে বলবে, ما الذي حدث لها وما شأنها ‘এর কি হ’ল? এর কি অবস্থা’? কেননা তারা ক্বিয়ামতে বিশ্বাসী ছিল না। মুমিনরা ভীতচকিত হ’লেও বিস্মিত হবে না। কেননা আগে থেকেই তারা ক্বিয়ামতে বিশ্বাসী ছিল।

(৪) يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا ‘সেদিন সে তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে’।
কুরতুবী ও ইবনু কাছীর বলেন, এর অর্থ হ’ল أى تخبر الأرض يومئذ بما عمل عليها من خير أو شر- ‘পৃথিবী সেদিন তার উপরে যে সব ভাল ও মন্দ কর্ম সংঘটিত হয়েছে, সব বলে দেবে’। يَوْمَئِذٍ ‘বদল’ হয়েছে إِذَا زُلْزِلَتِ থেকে। সেকারণ يَوْمَ -এর উপরে ‘যবর’ হয়েছে। في ذلك الوقت تحدث أخبارها ‘সেই সময় পৃথিবী তার সব খবর বলে দেবে’ (ক্বাসেমী)।অথবা এটি جواب شرط হয়েছে إِذَا زُلْزِلَتِ থেকে। অর্থাৎ যেদিন ক্বিয়ামত হবে, সেদিন পৃথিবী সবকিছু বলে দেবে’। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মুওয়াযযিনের আযানের ধ্বনি জিন, ইনসান, গাছ, পাথর, মাটি সহ যেই-ই শুনবে, সকল বস্ত্তই ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য সাক্ষ্য প্রদান করবে’।[৮] আর এটা হবে আল্লাহর ন্যায়বিচারের প্রমাণ হিসাবে এবং পাপীদের অস্বীকারের জওয়াব হিসাবে। যেমন আল্লাহ বলেন, وَيَوْمَ نَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا ثُمَّ نَقُولُ لِلَّذِينَ أَشْرَكُوا أَيْنَ شُرَكَاؤُكُمُ الَّذِينَ كُنْتُمْ تَزْعُمُونَ- ثُمَّ لَمْ تَكُنْ فِتْنَتُهُمْ إِلاَّ أَنْ قَالُوا وَاللهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِينَ- ‘স্মরণ কর সেদিনের কথা যেদিন আমরা সকলকে একত্রিত করব, অতঃপর যারা আমার সাথে অন্যকে শরীক করেছিল তাদেরকে আমরা বলব, কোথায় তোমাদের শরীকগণ যাদেরকে তোমরা উপাস্য বলে ধারণা করতে’? ‘তখন তাদের শিরকের ফল এছাড়া আর কিছুই হবে না যে তারা বলবে, আল্লাহর কসম! হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা মুশরিক ছিলাম না’ (আন‘আম ৬/২২-২৩; মুমিন ৪০/৭৪)। তবে পৃথিবী সাক্ষ্য দেওয়ার ফলে তাদের আর কিছুই বলার থাকবে না।

(৫) بِأَنَّ رَبَّكَ أَوْحَى لَهَا ‘কেননা তোমার পালনকর্তা তাকে প্রত্যাদেশ করবেন’।
أَوْحَى لَهَا অর্থ أوحى إليها ‘তার প্রতি নির্দেশ দিবেন’। অর্থাৎ أَذِنَ لَهَا فِي أَنْ تُحَدِّثَ أَخْبَارَهَا ‘আল্লাহ তাকে তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করার অনুমতি দিবেন’। কেবল পৃথিবীকে নয়, বরং মানুষের চোখ, কান ও দেহচর্ম সবাইকে আল্লাহ কথা বলার অনুমতি দিবেন এবং তারা যথাযথভাবে সাক্ষ্য প্রদান করবে। যেমন আল্লাহ বলেন, وَيَوْمَ يُحْشَرُ أَعْدَاءُ اللهِ إِلَى النَّارِ فَهُمْ يُوزَعُوْنَ، حَتَّى إِذَا مَا جَاءُوْهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ وَجُلُوْدُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ، وَقَالُوْا لِجُلُوْدِهِمْ لِمَ شَهِدْتُمْ عَلَيْنَا قَالُوْا أَنْطَقَنَا اللهُ الَّذِيْ أَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ ‘যেদিন আল্লাহর শত্রুদের জাহান্নাম অভিমুখে সমবেত করা হবে, সেদিন তাদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বিভিন্ন দলে’। ‘অবশেষে যখন তারা জাহান্নামের সন্নিকটে পৌঁছবে, তখন তাদের কর্ণ, চক্ষু ও ত্বক তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে’। ‘জাহান্নামীরা তখন তাদের ত্বককে বলবে, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছ কেন? উত্তরে তারা বলবে, আল্লাহ আমাদের বাকশক্তি দিয়েছেন, যিনি সবকিছুকে বাকশক্তি দান করেছেন’ (হা-মীম সাজদাহ/ফুছছিলাত ৪১/১৯-২১)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَى أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ‘আজ আমরা তাদের মুখে মোহর মেরে দেব এবং আমাদের সাথে কথা বলবে তাদের হাত ও তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে তাদের পা’ (ইয়াসীন ৩৬/৬৫)।

(৬) يَوْمَئِذٍ يَّصْدُرُ النَّاسُ أَشْتَاتاً لِّيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ ‘সেদিন মানুষ বিভিন্ন দলে প্রকাশ পাবে, যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সমূহ দেখানো যায়’।
অর্থাৎ সেদিন মানুষ তাদের কবর হ’তে হিসাবস্থলের দিকে দলে দলে সমবেত হবে। অতঃপর হিসাব শেষে সেখান থেকে কেউ জান্নাতীদের ডান সারিতে কেউ জাহান্নামীদের বাম সারিতে প্রকাশ পাবে (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৭-৯; বালাদ ৯০/১৭-১৯)। এভাবে মানুষ দলে দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ বলেন, يَوْمَ نَحْشُرُ الْمُتَّقِيْنَ إِلَى الرَّحْمَنِ وَفْدًا- وَنَسُوقُ الْمُجْرِمِيْنَ إِلَى جَهَنَّمَ وِرْدًا ‘সেদিন আমরা দয়াময়ের নিকট মুত্তাকীদেরকে সম্মানিত মেহমানরূপে সমবেত করব’। ‘এবং অপরাধীদেরকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নেব’ (মারিয়াম ১৯/৮৫-৮৬)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَيَوْمَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ يَوْمَئِذٍ يَّتَفَرَّقُوْنَ، فَأَمَّا الَّذِيْنَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَهُمْ فِيْ رَوْضَةٍ يُحْبَرُوْنَ، وَأَمَّا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِآيَاتِنَا وَلِقَاءِ الْآخِرَةِ فَأُوْلَئِكَ فِي الْعَذَابِ مُحْضَرُوْنَ- ‘যে দিন ক্বিয়ামত সংঘঠিত হবে, সেদিন মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়বে’। ‘অতঃপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তারা জান্নাতে সমাদৃত হবে’। ‘পক্ষান্তরে যারা অবিশ্বাসী হয়েছে এবং আমার আয়াত সমূহ ও পরকালের সাক্ষাতকে মিথ্যা বলেছে, তাদেরকে আযাবের মধ্যে হাযির করা হবে’ (রূম ৩০/১৪-১৬)। أَشْتَاتًا অর্থ فِرَقًا فِرَقًا ‘দলে দলে’। একবচনে شَتٌّ (কুরতুবী)। لِيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ অর্থ ليريهم الله جزاء ماعملوه فى الدينا من خير وشر ‘দুনিয়ায় তাদের ভাল-মন্দ কর্মের ফলাফল আল্লাহর পক্ষ হ’তে দেখানোর জন্য’। সেদিন প্রত্যেকের হাতে আমলনামা দিয়ে বলা হবে, اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيْبًا ‘তুমি তোমার আমলনামা পাঠ কর। আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশের জন্য যথেষ্ট’ (ইসরা ১৭/১৪)। অতএব মানুষের কর্তব্য প্রতিদিন শুতে যাবার আগে নিজের কর্মের হিসাব নিজে নেওয়া। কেননা তার সব কর্মই লিখিত হচ্ছে।

(৭) فَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْراً يَّرَهُ ‘অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা সে দেখতে পাবে’।
(৮) وَمَن يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَّرَهُ ‘এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও সে দেখতে পাবে’।
ذَرَّةٍ অর্থ বিন্দু, সরিষাদানা, ছোট্ট পিপীলিকা। এর দ্বারা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ছোট্ট বস্ত্তর উপমা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ পাপ বা পূণ্য যত ছোটই হৌক না কেন ক্বিয়ামতে বিচারের দিন তা দেখা হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللهَ لاَ يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ وَإِنْ تَكُ حَسَنَةً يُضَاعِفْهَا وَيُؤْتِ مِنْ لَدُنْهُ أَجْرًا عَظِيمًا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এক অণু পরিমান যুলুম করবেন না। যদি কেউ অণু পরিমান সৎকর্ম করে, তবে তিনি তাকে দ্বিগুণ প্রতিদান দেন এবং আল্লাহ তার পক্ষ হ’তে মহা পুরস্কার দান করে থাকেন’ (নিসা ৪/৪০)। সেদিন সব আমল ওযন করা হবে। যার ওযন ভারী হবে, সে জান্নাতী হবে। আর যার ওযন হালকা হবে, সে জাহান্নামী হবে’ (ক্বারে‘আহ ১০১/৬-৯)। ঐ ওযন কিভাবে করা হবে, সেটি গায়েবী বিষয়। যা কেবল আল্লাহ জানেন। অর্থাৎ সৎ বা অসৎকর্ম, তা যত ছোটই হৌক না কেন, সবকিছু ঐদিন হিসাবে চলে আসবে এবং তার যথাযথ প্রতিদান ও প্রতিফল পাবে। যেমন আল্লাহ বলেন, يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُّحْضَراً وَمَا عَمِلَتْ مِن سُوْءٍ، ‘সেদিন প্রত্যেকেই যা কিছু সে ভাল কাজ করেছে, চোখের সামনে দেখতে পাবে এবং যা কিছু মন্দ কাজ করেছে তাও..., (আলে ইমরান ৩/৩০)। তবে যে ব্যক্তি অন্যায় কর্ম থেকে খালেছ অন্তরে তওবা করে, সে ব্যক্তির উক্ত মন্দকর্ম হিসাব থেকে বাদ যাবে। যেমন আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا تُوبُوْا إِلَى اللهِ تَوْبَةً نَّصُوْحاً عَسَى رَبُّكُمْ أَن يُّكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَار، ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর নিকটে তওবা কর খালেছ তওবা। আশা করা যায় তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের পাপ সমূহ মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে। যার তলদেশ দিয়ে নদী সমূহ প্রবাহিত হয়’ (তাহরীম ৬৬/৮)। বিচারের দিন কিছু মুমিনের গোপন পাপ সম্পর্কে আল্লাহ একাকী তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করবেন। তখন সে সব কথা স্বীকার করবে। যখন আল্লাহ দেখবেন যে, এতে সে ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন তিনি তাকে বলবেন, إِنِّى قَدْ سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِى الدُّنْيَا وَإِنِّى أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ ‘আমি এগুলি তোমার উপর দুনিয়ায় গোপন রেখেছিলাম। আর আজ আমি তোমার জন্য ঐগুলি ক্ষমা করে দিলাম’।[৯] হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীছের শেষ দিকে অত্র আয়াতটি (যিলযাল ৭-৮) সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, اَلْآيَةُ الْفَاذَّةُ الْجَامِعَةُ ‘এটি অনন্য ও সারগর্ভ আয়াত’।[১০] আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) অত্র আয়াতটিকে أحكم آية فى القرآن ‘কুরআনের সবচেয়ে বড় বিধান দানকারী আয়াত’ বলে অভিহিত করেছেন এবং সকল বিদ্বান এ বিষয়ে একমত’ (কুরতুবী)। শিক্ষাঃ
কিয়ামত ও পৃথিবীর কম্পন:
সূরাটির প্রথম অংশে কিয়ামতের ভয়াবহতার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে, পৃথিবীর ওপর প্রবল ভূমিকম্প হবে এবং ভূমি তার অভ্যন্তরে থাকা সব ভার বা মৃতদের বের করে দেবে।
মানুষের জিজ্ঞাসা ও পৃথিবীর সাক্ষ্য:
এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মানুষ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করবে, 'পৃথিবীর কী হলো?' তখন আল্লাহ পৃথিবীকে তার গোপন কথা জানানোর আদেশ দেবেন, যার ফলে পৃথিবী তার ভেতরের সকল রহস্য প্রকাশ করবে।
মানুষের কর্মের বিচার:
এরপর মানুষ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের কর্মের ফল দেখতে আসবে। আল্লাহ বলেন, "সুতরাং যে কেউ অণু পরিমাণও ভালো কাজ করেছে, সে তা দেখবে। আর যে কেউ অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করেছে, সেও তা দেখবে।"
কাজের হিসাব ও পরকালীন জীবন:
এই সূরার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে যে, দুনিয়াতে করা প্রত্যেকটি ভালো বা খারাপ কাজের হিসাব কিয়ামতের দিন মানুষের সামনে উপস্থিত হবে। এটি মৃত্যুর পরের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।
কর্মের গুরুত্ব:
সূরা যিলযাল গুরুত্ব দেয় প্রতিটি কাজের উপর, তা যতই সামান্য হোক না কেন। এই শিক্ষা মানুষকে ভালো কাজে উৎসাহিত করে এবং মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকতে উৎসাহিত করে।
পরকালের প্রস্তুতি:
এই সূরা পরকালের বাস্তবতাকে তুলে ধরে এবং মানুষকে দুনিয়ার জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিতে উৎসাহিত করে, কারণ প্রত্যেকের কাজের হিসাব দিতে হবে।
সতর্ক বার্তা:
এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সতর্ক বার্তা, যা মানুষকে তাদের কর্ম সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং তাদের ভালো ও মন্দ কাজের পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলে।

জাহান্নাম থেকে বাঁচুন :
(১) হযরত আদী বিন হাতেম (রাঃ) বলেন রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ ، فَإِنْ لَمْ تَجِدْ فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ ‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো একটা খেজুরের টুকরা দিয়ে হ’লেও কিংবা একটু মিষ্ট কথা দিয়ে হ’লেও’।[১১]
(২) আবু যর গিফারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لاَ تَحْقِرَنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ شَيْئًا وَلَوْ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ ‘সামান্য নেকীর কাজকেও তুমি ছোট মনে করো না। এমনকি তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করার মাধ্যমে হ’লেও’।[১২]
(৩) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, يَا نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ لاَ تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ ‘হে মুমিন নারীগণ! তোমরা প্রতিবেশীকে বকরীর পায়ের দুই ক্ষুরের মধ্যেকার সামান্য গোশত দিয়ে সাহায্য করাকেও তুচ্ছ মনে করো না’।[১৩] উম্মে বুজাইদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,رُدُّوا السَّائِلَ وَلَوْ بِظِلْفٍ مُحْرَقٍ ‘পোড়ানো ক্ষুর হ’লেও সায়েলকে দাও’।[১৪]
(৪) আদী বিন হাতেম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَن يَّسْتَتِرَ مِنَ النَّارِ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ فَلْيَفْعَلْ ‘তোমাদের মধ্যে যদি কেউ একটা খেজুরের টুকরা দিয়েও নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর ক্ষমতা রাখে, তবে সে যেন তা করে’।[১৫] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলতেন, يَا عَائِشَةُ إِيَّاكِ وَمُحَقِّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإِنَّ لَهَا مِنَ اللهِ طَالِباً ‘হে আয়েশা! তুচ্ছ গোনাহ হ’তেও বেঁচে থাকো। কেননা উক্ত বিষয়েও আল্লাহর পক্ষ হ’তে কৈফিয়ত তলব করা হবে’।[১৬]
(৫) হযরত জাবের ও হুযায়ফা (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, كُلُّ مَعْرُوْفٍ صَدَقَةٌ ‘প্রত্যেক নেকীর কাজই ছাদাক্বা’।[১৭]
কাফিরের সৎকর্ম : প্রশ্ন হ’ল, ক্বিয়ামতের দিন কাফিররা তাদের সৎকর্মের পুরস্কার পাবে কি?
এর জবাব এই যে, যারা দুনিয়াতে আল্লাহকে বা তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছে, তারা আখেরাতে কিভাবে পুরস্কার পেতে পারে? আল্লাহ বলেন, وَالَّذِيْنَ كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لاَ يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا وَلاَ يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِنْ عَذَابِهَا كَذَلِكَ نَجْزِي كُلَّ كَفُوْرٍ- ‘যারা কুফরী করেছে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের সেখানে মৃত্যুর আদেশ দেওয়া হবেনা যে তারা মরবে এবং তাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তিও হালকা করা হবেনা। এভাবেই আমরা প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে শাস্তি দিয়ে থাকি’ (ফাত্বির ৩৫/৩৬)। অন্যত্র তিনি বলেন, وَقَالَ الَّذِيْنَ فِي النَّارِ لِخَزَنَةِ جَهَنَّمَ ادْعُوا رَبَّكُمْ يُخَفِّفْ عَنَّا يَوْمًا مِنَ الْعَذَابِ- قَالُوا أَوَلَمْ تَكُ تَأْتِيكُمْ رُسُلُكُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا بَلَى قَالُوا فَادْعُوا وَمَا دُعَاءُ الْكَافِرِيْنَ إِلاَّ فِي ضَلاَلٍ- ‘জাহান্নামের অধিবাসীরা তাদের প্রহরীদের বলবে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে বল, তিনি যেন একদিনের জন্য আমাদের শাস্তি হালকা করেন’। জবাবে ‘তারা বলবে, তোমাদের নিকটে কি নিদর্শনাবলীসহ তোমাদের রাসূলগণ আসেননি? জাহান্নামীরা বলবে, নিশ্চয়ই এসেছিল। প্রহরীরা বলবে, তাহ’লে তোমরাই প্রার্থনা কর। আর কাফিরদের প্রার্থনা ব্যর্থই হয়ে থাকে’ (গাফের/মুমিন ৪০/৪৯-৫০)। বস্তুত কাফিরদের সৎকর্মের পুরস্কার আল্লাহ দুনিয়াতেই দিবেন তাদের নাম-যশ বৃদ্ধি, সুখ-সমৃদ্ধি, সন্তানাদি ও রূযী বৃদ্ধি ইত্যাদির মাধ্যমে। কিন্তু আখেরাতে তারা কিছুই পাবে না। যেমন তিনি বলেন, مَنْ كَانَ يُرِيْدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ ‘যে ব্যক্তি আখেরাতের ফসল কামনা করে, তার জন্য আমরা তার ফসল বর্ধিত করে দেই। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল কামনা করে, আমরা তাকে সেখান থেকে কিছু দেই। তবে তার জন্য আখেরাতে কিছুই থাকবে না’ (শূরা ৪২/২০)। আল্লাহ বলেন, وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُوْرًا ‘আর আমরা তাদের কৃতকর্মগুলোর দিকে অগ্রসর হব। অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব’ (ফুরক্বান ২৫/২৩)। কেননা কুফরী তাদের সকল সৎকর্মকে বিনষ্ট করে দিবে এবং তারা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে। এমনকি ক্বিয়ামতের দিন তাদের আমল ওযন করার জন্য দাড়িপাল্লাও খাড়া করা হবেনা। যেমন আল্লাহ বলেন, أُولَئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَائِهِ فَحَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَلاَ نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا ‘(ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারী হ’ল তারাই) যারা তাদের প্রতিপালকের আয়াত সমূহকে এবং তাঁর সাথে সাক্ষাতকে অবিশ্বাস করে, তাদের সমস্ত আমল নিস্ফল হয়ে যায়। অতএব ক্বিয়ামতের দিন আমরা তাদের জন্য দাড়িপাল্লা খাড়া করব না’ (কাহফ ১৮/১০৫)। কেননা তা নেকী হ’তে খালি থাকবে। তারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে। তবে তাদের পাপের তারতম্য অনুযায়ী শাস্তির তারতম্য হ’তে পারে। যেমন আবু ত্বালিবের শাস্তি সবচেয়ে কম হবে। তাকে আগুনের জুতা ও ফিতা পরানো হবে। তাতেই তার মাথার ঘিলু টগবগ করে ফুটবে। তবে এটি ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য খাছ। যেমন তিনি বলেন, ‘আমি তাকে আগুনে ডুবন্ত পেয়েছিলাম। অতঃপর (সুফারিশের মাধ্যমে) আমি তাকে হালকা আগুনে উঠিয়ে আনি। অর্থাৎ টাখনু পর্যন্ত আগুনে পুড়বে’। তিনি বলেন, ‘যদি আমি না হ’তাম, তাহ’লে তিনি থাকতেন জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে’।[১৮] শাস্তির এই তারতম্য আখেরাতে সকল কাফিরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি-না, সেটি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর এখতিয়ারে। তবে এটা নিশ্চিত যে, কাফেররা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। যেমন আল্লাহ বলেন, إِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوا وَمَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلاَئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ- خَالِدِينَ فِيْهَا لاَ يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلاَ هُمْ يُنْظَرُوْنَ- ‘নিশ্চয়ই যারা কুফরী করে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তাদের উপর আল্লাহর লা‘নত এবং ফেরেশতামন্ডলী ও সকল মানুষের লা‘নত’। ‘সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। তাদের শাস্তি হালকা করা হবেনা এবং তাদের কোনরূপ অবকাশ দেওয়া হবেনা’ (বাক্বারাহ ২/১৬১-৬২)।
সারকথা :
কর্ম যত ছোটই হৌক তা ধ্বংস হয় না। অতএব সৎকর্ম যত ছোটই হৌক তা করতে হবে এবং পাপ যত ছোটই হৌক তা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
সুত্রঃ

[১]. নাসাঈ কুবরা হা/১১৬৯৪; আহমাদ হা/২০৬১২, হাদীছ ছহীহ; ফারাযদাক্ব-এর দাদা হওয়াটাই সঠিক। তাঁর বংশ পরিচয় হ’ল : ফারাযদাক্ব আল-হাম্মাম বিন গালিব বিন ছা‘ছা‘আহ বিন নাজিয়াহ (আল-ইছাবাহ ক্রমিক সংখ্যা ৭০২৯)।
[২]. الرُّوَيْجِلُ শব্দটি الراجل থেকে تصغير হয়েছে। অর্থ الماشى ضد الراكب ‘পায়ে চলা ব্যক্তি, যা আরোহীর বিপরীত’।
[৩]. আহমাদ হা/৬৫৭৫, আরনাঊত্ব, সনদ হাসান; হাকেম হা/৩৯৬৪, সনদ ছহীহ; তাফসীর ইবনু কাছীর।
[৪]. ত্বাবারাণী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/১১৫১২; হায়ছামী বলেন, এর সকল রাবী ছহীহ-এর রাবী এবং এর দুর্বলতাটুকুর জন্য শাওয়াহেদ রয়েছে, যা তাকে শক্তিশালী করে। কুরতুবী হা/৬৪৩৬; হাদীছের শেষের অংশটি (لَوْلاَ أَنَّكُمْ تُذْنِبُونَ الخ) মুসলিম হা/২৭৪৮ ও তিরমিযী হা/৩৫৩৯-য়ে বর্ণিত হয়েছে।
[৫]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৭৭৩।
[৬]. বুখারী হা/৪৯৩৫, মুসলিম হা/২৯৫৫, মিশকাত হা/৫৫২১ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায়, ‘শিঙ্গায় ফুঁক দান’ অনুচ্ছেদ; ফাৎহুল বারী হা/৬৫১৭-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
[৭]. মুসলিম হা/১০১৩; তিরমিযী হা/২২০৮; মিশকাত হা/৫৪৪৪ ‘ক্বিয়ামতের আলামত সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
[৮]. ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৩৮৯; বুখারী হা/৬০৯; নাসাঈ, আহমাদ, মিশকাত হা/৬৫৬, ৬৬৭।
[৯]. বুখারী হা/২৪৪১; মুসলিম হা/২৭৬৮।
[১০]. বুখারী হা/৪৯৬২; মুসলিম হা/৯৮৭; মিশকাত হা/১৭৭৩ ‘যাকাত’ অধ্যায়।
[১১]. বুখারী হা/৮৪১৭‘ যাকাত’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৫৮৫৭ ‘নবুঅতের নিদর্শন সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
[১২]. মুসলিম হা/২৬২৬, তিরমিযী হা/১৮৩৩, মিশকাত হা/১৮৯৪ ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাক্বার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ।
[১৩]. বুখারী হা/২৫৬৬; মুসলিম, মিশকাত হা/১৮৯২।
[১৪]. আহমাদ হা/১৬৬৯৯; নাসাঈ হা/২৫৬৫; মিশকাত হা/১৯৪২ ‘শ্রেষ্ঠ ছাদাক্বা’ অনুচ্ছেদ।
[১৫]. মুসলিম হা/১০১৬ ‘যাকাত’ অধ্যায়, ২০ অনুচ্ছেদ।
[১৬]. নাসাঈ, ইবনু মাজাহ হা/৪২৪৩, মিশকাত হা/৫৩৫৬ ‘রিক্বাক্ব’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬; ছহীহাহ হা/২৭৩১।
[১৭]. বুখারী হা/৬০২১, মুসলিম হা/১০০৫, মিশকাত হা/১৮৯৩ ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাক্বার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-৬।
[১৮]. বুখারী হা/৫১৭; মুসলিম হা/৩৬১, ৩৫৮; মিশকাত হা/৫৬৬৮ ‘জাহান্নাম ও তার অধিবাসীদের বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ।

বই নোট: সংগঠন পদ্ধতিঃ

প্রকাশক ঃ
আবু তাহের মুহাম্মাদ মা’ছুম চেয়ারম্যান,
প্রকাশনা বিভাগ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
৫০৫ এলিফ্যান্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
প্রথম প্রকাশ ঃ নভেম্বরঃ ১৯৮৩
৫২ তম প্রকাশঃ জানুয়ারী ২০২১
প্রকাশকের কথা:
ইসলামী আন্দোলনের কাজকে সুন্দর, সঠিক ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সম্পাদন করার জন্য জামায়াতে ইসলামী যুগোপযোগী বিজ্ঞানসম্মত ০৪ (চার) দফা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সংগঠন পদ্ধতি বইটি মূলত জামায়াতের ৪ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের পদ্ধতিগত বিষয় সমূহের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের সমষ্টি।
ভূমিকা ঃ
সংগঠন পদ্ধতির ২টি দিক গুরূত্বপূর্ণঃ-
১। কর্মনীতি বা কর্ম কৌশল;
২। কর্মসূচি বা আন্দোলনের বহুমুখী কাজের নির্ঘণ্ট।
(খ) জামায়াতের স্থায়ী কর্মসূচি ঃ
রাসূল (সা.) যে কর্মসূচির মাধ্যমে একটি সফল সমাজ বিপ্লব সাধন করে তদানীন্তন বিশ্বে আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন, সে বিপ্লবী কর্মসূচিকেই জামায়াতে ইসলামী তার কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করেছে যা নিম্নরূপ ঃ
১। চিন্তার পরিশুদ্ধি ও পুনর্গঠন ঃ
বাংলাদেশের সকল নাগরিকের নিকট ইসলামের প্রকৃত রূপ বিশেষণ করিয়া চিন্তার বিশুদ্ধিকরণ ও বিকাশ সাধনের মাধ্যমে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের অনুসরণ ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অনুভূতি জাগ্রত করা।
২। সংগঠন ও প্রশিক্ষণ ঃ
ইসলামকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করিবার সংগ্রামে আগ্রহী সৎ ব্যক্তিদিগকে সংগঠিত করা এবং তাহাদিগকে ইসলাম কায়েম করিবার যোগ্যতাসম্পনড়ব হিসাবে গড়িয়া তুলিবার উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ দান করা।
৩। সমাজ সংস্কার ও সমাজ সেবা ঃ
ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে সামাজিক সংশোধন, ক্সনতিক পুনর্গঠন ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সাধন এবং দুস্থ মানবতার সেবা করা।
৪। রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও সংশোধন ঃ
গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার পরিবর্তন এবং সমাজের সর্বস্তরে সৎ ও চরিত্রবান নেতৃত্ব কায়েমের চেষ্টা করা।

প্রথম দফা কর্মসূচি: দাওয়াত ও তাবলীগ

দাওয়াতের মাধ্যমে চিন্তার পরিশুদ্ধি ও পুনর্গঠনের কাজ গঠনতন্ত্রের ভাষায় জামায়াতের প্রথম দফা কর্মসূচি হলো ঃ “বাংলাদেশের সকল নাগরিকের নিকট ইসলামের প্রকৃতরূপ বিশেষণ করিয়া চিন্তার বিশুদ্ধিকরণ ও বিকাশ সাধনের মাধ্যমে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের অনুসরণ ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অনুভূতি জাগ্রত করা।” প্রথম দফার তিনটি দিক ঃ
ক। সকল নাগরিকের নিকট ইসলামের সঠিক ধারণা তুলে ধরা।
খ। ব্যক্তি ও সমাজের ভেতর ইসলাম বিরোধী ধ্যান-ধারণার অবসান।
গ। ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার জন্য উৎসাহ প্রদান।
এ দফার কাজগুলো নিম্নরূপ ঃ
    ১। ব্যক্তিগত যোগাযোগ (টার্গেট ভিত্তিক ও সাধারণ)।
    ২। গ্রূপ ভিত্তিক যোগাযোগ
    ৩। ইসলামী সাহিত্য বিতরণ
    ৪। বই বিলিকেন্দ্র স্থাপন
    ৫। পাঠাগার প্রতিষ্ঠা
    ৬। বই বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন ও ব্যক্তিগতভাবে বই বিক্রয়
    ৭। পরিচিতি, লিফলেট বিতরণ ও পোস্টারিং
    ৮। মাসিক সাধারণ সভা
    ৯। দাওয়াতী জনসভা ও ইসলামী মাহফিল
    ১০। দাওয়াতী ইউনিট গঠন
    ১১। আলোচনা সভা ও সুধী সমাবেশ
    ১২। সিরাতুন্নববী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাহফিল
    ১৩। আল কুরআনের দারস ও তাফসীর মাহফিল
    ১৪। ইসলামী দিবস পালন
    ১৫। মসজিদ ভিত্তিক দাওয়াতী কাজ ও মসজিদ সংগঠিতকরণ
    ১৬। পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে দাওয়াত সম্প্রসারণ
    ১৭। দাওয়াতী সপ্তাহ/পক্ষ পালন ও দাওয়াতী অভিযান/গণসংযোগ অভিযান
    ১৮। জুম’আ বক্তৃতা ও ঈদগাহে আলোচনা
    ১৯। দাওয়াতী চিঠি/ফোন আলাপ ও ইন্টারনেট ব্যবহার
    ২০। দাওয়াতী বই উপহার প্রদান
    ২১। ইফতার মাহফিল
    ২২। সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম
    ২৩। চা-চক্র ও বনভোজন
    ২৪। হামদ-না’ত ইত্যাদির চর্চা
    ২৫। দাওয়াতী ক্যাসেট তৈরি ও প্রচার ।

দ্বিতীয় দফা কর্মসূচি ঃ সংগঠন ও প্রশিক্ষণ


গঠনতন্ত্রের ভাষায় জামায়াতের দ্বিতীয় দফা কর্মসূচি হলো ঃ
“ইসলামকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করিবার সংগ্রামে আগ্রহী সৎ ব্যক্তিদিগকে সংগঠিত করা এবং তাহাদিগকে ইসলাম কায়েম করিবার যোগ্যতাসম্পন্নব হিসাবে গড়িয়া তুলিবার উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ দান করা।”
দ্বিতীয় দফার প্রধানত দুটো দিক রয়েছে ঃ
(ক) সংগঠন ও (খ) প্রশিক্ষণ

(ক) সংগঠন

জামায়াতের সাংগঠনিক বৈশিষ্ট্যঃ
    ১। জামায়াতের সকল নীতি ও সিদ্ধান্ত পরামর্শের ভিত্তিতে গৃহীত হয়।
    ২। অভ্যন্তরীণ পরিবেশ উন্নবত রাখার জন্য পারস্পরিক সংশোধনের সম্মানজনক পদক্ষেপ নেয়া হয়।
    ৩। সকল নীতি ও সিদ্ধান্ত কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষার নিরিখে গ্রহণ করা হয়।

জামায়াতের স্তর বিন্যাসের দু’টি দিক-

(ক) সাংগঠনিক জনশক্তির স্তর বিন্যাস (খ) সাংগঠনিক কাঠামোর স্তর বিন্যাস

(ক) সাংগঠনিক জনশক্তির স্তর বিন্যাস ঃ
জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে জনশক্তিকে সদস্য (রুকন) ও সহযোগী সদস্য ২ (দুই) ভাগে ভাগ করা থাকলেও কার্যত জনশক্তি তিন ভাগে বিভক্ত। সহযোগী সদস্য, কর্মী ও সদস্য (রুকন)। ক। সহযোগী সদস্য
খ। কর্মী ঃ
    কর্মীর ৫ টি কাজঃ
    ১) নিয়মিতভাবে বৈঠকে যোগদান করেন,
    ২) ইয়ানত দেন,
    ৩) রিপোর্ট রাখেন ও বৈঠকে পেশ করেন
    ৪) দাওয়াতী কাজ করেন ও
    ৫) সামাজিক কাজ করেন তাদেরকে জামায়াতের কর্মী বলা হয়।
গ। সদস্য বা রুকন।

খ) সাংগঠনিক কাঠামোর স্তর বিন্যাসঃ
    কেন্দ্র
    জেলা/মহানগরী
    উপজেলা/থানা
    পৌরসভা/ইউনিয়ন
    ওয়ার্ড
    ইউনিট

ক) কেন্দ্রঃ
    ১। আমীরে জামায়াত
    ২। মজলিশে শুরা
    ৩। কর্ম পরিষদ
    ৪। নির্বাহি পরিষদ
    ৫। কেন্দ্রীয় সদস্য (রুকন) সম্মেলন
    ৬। জেলা/মহানগরী আমীর সম্মেলন

খ) জেলা/মহানগরীঃ
    ১। জেলা/মহানগরী আমীর
    ২। জেলা/মহানগরী মজলিশে শুরা
    ৩। জেলা/মহানগরী কর্ম পরিষদ
    ৪। জেলা/মহানগরী সদস্য (রুকন) সম্মেলন ও মাসিক সদস্য (রুকন) বৈঠক
    ৫। জেলা/মহানগরী বৈঠক
    ৬। জেলা/মহানগরী পর্যায়ে বিভাগ বন্টন

গ) উপজেলা/থানাঃ
    ১। উপজেলা/থানা আমীর বা সভাপতি
    ২। উপজেলা/থানা মজলিশে শুরা
    ৩। উপজেলা/থানা কর্ম পরিষদ
    ৪। উপজেলা/থানা সদস্য (রুকন) বৈঠক
    ৫। উপজেলা/থানা বৈঠক
    ৬। সংগঠিত উপজেলা/থানা

ঘ) পৌরসভা/ইউনিয়নঃ
    ১। পৌরসভা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ডে আমীর বা সভাপতি
    ২। পৌরসভা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড সদস্য (রুকন) বৈঠক
    ৩।পৌরসভা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড বৈঠক
    ৪। সংগঠিত ইউনিয়ন

ঙ) ওয়ার্ডঃ
    ১। দাওয়াতী ইউনিট
    ২। ইউনিট, শর্তসমুহঃ ঃ
      (ক) কমপক্ষে চারজন কর্মী থাকা
      (খ) নিয়মিত বৈঠকাদি হওয়া;
      (গ) মাসে কমপক্ষে একবার দাওয়াতী গ্রুপ বের করা;
      (ঘ) ও একজন সক্রিয় সভাপতি কর্তৃক কাজ পরিচালিত হওয়া;
      (ঙ) মাসিক রিপোর্ট ও নিছাব যথারীতি আদায় করা;

    ৩। ইউনিট প্রোগ্রামঃ
    ইউনিটে প্রতিমাসে কমপক্ষে নিম্নোক্ত ৪টি প্রোগ্রাম করতে হবে।
      ক) কর্মী বৈঠক। ইউনিট সভাপতি কর্মী বৈঠক পরিচালনা করবেন।
      খ) সাধারণ সভা বা দাওয়াতী সভা
      গ) প্রশিক্ষণ (তারবিয়াতী) বৈঠক
      ঘ) দাওয়াতী অভিযান
    ৪। কর্মী বৈঠক

দ্বিতীয় দফার অন্যান্য সাংগঠনিক কাজ নিম্নরূপ -
    ১। টার্গেট ভিত্তিক যোগাযোগঃ
      ক) দাওয়াতি টার্গেট,
      খ) কর্মী টার্গেট ঃ টার্গেট নেয়ার সময় যে সকল গুণাবলীসম্পন্ন ব্যক্তি বাছাই করা দরকার।
         কর্মঠ;
         বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ;
         সামাজিক;
         সৎ ও সত্যপ্রিয়।
        নেতৃত্বের যোগ্যতা সম্পন্ন।
      গ) রুকন (সদস্য) টার্গেট
        ২। কর্মী যোগাযোগঃ
          ক) কর্মী যোগাযোগের উদ্দেশ্যঃ মান উন্নন, সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ, দুর্বলতা দূর করা, কাজে আরও উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করা, সম্পর্ক আরো মধুর করা, সমস্যা অবগত হওয়া এবং সমাধান বের করা ইত্যাদি লক্ষ্য নিয়ে দায়িত্বশীলদের কর্মী যোগাযোগ করতে হবে।
          খ) কর্মী যোগাযোগের পদ্ধতি
            ১) পূর্বেই পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে স্থান ও সময় নির্দ্ধারণ।
            ২) সাক্ষাতের শুরুতে সালাম বিনিময়ের পর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা জানার চেষ্টা।
            ৩) ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার খোঁজ-খবর নেওয়া ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান।
            ৪) সাংগঠনিক বিষয়াদী নিয়ে আলোচনা করা।
            ৫) আন্দোলন সংগঠন সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য অবহিতকরণ।
            ৬) কর্মীর দুর্বলতাগুলো দরদ ভরা মন দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া।
            ৭) মান উন্নয়নের জন্য উৎসাহিত করা।
            ৮) সময় ও অর্থ ব্যয়ের ফজিলতগুলো কোরআন ও হাদীস থেকে বর্ণনা করা।
            ৯) কুরআন হাদীসের বর্ণনা অনুসারে ব্যক্তিগত গুণাবলী অর্জনে উদ্বুদ্ধ করা। [সূরা মুমিনুন এর ১-১১, ফুরকান শেষ রুকু, মুজাম্মিল ১-৭ আয়াত]
            ১০) পারস্পরিক দোয়া কামনা করে শেষ করা।

          উপরোক্ত লক্ষ্য অর্জনে উপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রত্যেক দায়িত্বশীলকে তার অধঃস্তন সংগঠনের ব্যক্তিদের সাথে কর্মী যোগাযোগ করতে হবে।

        ৩। সফর;

        ৪। পরিকল্পনাঃ
        ক) পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় নিম্নোক্ত বিষয়ের উপর দৃষ্টি রাখতে হবেঃ
          জনশক্তি (সংগঠনের জনশক্তি)
          নেতৃত্বের মান
          কাজের পরিধি বা এলাকা
          বিভিন্ন দিকের পরিসংখ্যানমূলক জ্ঞান (জনসংখ্যা, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ইত্যাদি)।
          কর্মীদের মান
          অর্থনৈতিক অবস্থা
          পরিবেশ
          বিরোধী মহলের শক্তি ও তৎপরতা।
        খ) পরিকল্পনা পর্যালোচনা বৈঠক।

        ৫। সাংগঠনিক সপ্তাহ/পক্ষ পালন।
        ৬। নেতৃত্ব নির্বাচন।
        ৭। বায়তুল মালঃ ক) কর্মীদের আর্থিক কুরবাণী; খ) শুভাকাঙ্খীদের থেকে।
        ৮। রেকর্ডিংঃ বিশেষ করে নিমেড়বাক্ত জিনিসগুলো সংরক্ষণ করতে হয় ঃ
          ১. কর্মী ও সদস্যদের (রুকনদের) তালিকা (ঠিকানাসহ)
          ২. দায়িত্বশীলদের ঠিকানা ও টেলিফোন নাম্বার
          ৩. রিপোর্ট (সাংগঠনিক ও ব্যক্তিগত)
          ৪. বই-এর তালিকা
          ৫. সহযোগী সদস্যদের ফরম ও ফরমের মুড়ি
          ৬. সদস্যপ্রার্থী (রুকন প্রার্থী) আবেদনপত্র
          ৭. রশিদ বই-এর মুড়ি
          ৮. ক্যাশ বই
          ৯. লেজার
          ১০. বিভিন্ন পরামর্শ ফাইল
          ১১. বিভিন্ন বৈঠকের কার্যবিবরণী (শূরা/কর্মপরিষদ/ টীম, ষান্মাসিক সদস্য (রূকন) সম্মেলন, মাসিক সদস্য (রূকন) বৈঠক, কর্মী সম্মেলন, সভাপতি সম্মেলন, জনসভা, শিক্ষা শিবির, কেন্দ্রীয় সফর ইত্যাদি)।
          ১২. ছাপানো পোস্টার ও লিফেলেটের নমুনা কপি।
          ১৩. প্রকাশিত সংবাদ কাটিং, প্রেরিত সংবাদ কপি।
          ১৪. প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের তৎপরতা (নেতৃবৃন্দের ঠিকানা ও ফোন নাম্বার)।
          ১৫. সার্কুলার ঃ (ক) ঊর্ধ্বতন থেকে প্রাপ্ত, (খ) অধঃস্তনে প্রেরিত।
          ১৬. বিশিষ্ট লোকদের তালিকা প্রণয়ন ও নিয়মিত যোগাযোগ। যেমন রাজনৈতিক, উলামা-মাশায়েখ, আইনজীবী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ, জনপ্রতিনিধি ব্যক্তিবৃন্দ।
        উপরিউক্ত তথ্য সংরক্ষণের জন্য কমপক্ষে নিমড়বলিখিত রেজিস্টার ও ফাইলের প্রয়োজন ঃ
        রেজিস্টার ঃ
          ১) কর্মী তালিকা (উপজেলা/থানায়)
          ২) বই তালিকা ও ইস্যু রেজিস্টার
          ৩) সদস্য (রুকন) তালিকা
          ৪) বিভিন্ন বৈঠকের কার্যবিবরণী
          ৫) ক্যাশবুক ও লেজার বুক
          ৬) হাজিরা রেজিস্টার (বিভিন্ন বৈঠকে উপস্থিতি)
          ৭) সদস্য (রুকন) টার্গেট তালিকা ও প্রার্থী রেজিস্টার
          ৭) সাংগঠনিক রিপোর্ট রেকর্ড রেজিস্টার
          ৮) সদস্যদের (রুকনদের) ব্যক্তিগত রিপোর্ট রেজিস্টার
          ৯) দায়িত্বশীলদের ঠিকানা ও ফোন নাম্বার
          ১০) বিশিষ্ট লোকদের তালিকা
          ১১) রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের নাম ও ঠিকানা।
        ফাইল ঃ
          ১) সহযোগী সদস্য ফাইল (মুড়ি)
          ২) ভাউচার ফাইল
          ৩) রিপোর্ট ফাইল (উপরে পাঠানো, অধঃস্তনের কপি)
          ৪) সার্কুলার ফাইল (উপর থেকে প্রাপ্ত, নিচে প্রেরিত)
          ৫) চিঠির ফাইল (ঐ)
          ৬) পরিকল্পনা ফাইল (কেন্দ্রীয়, জেলা/মহানগরী, উপজেলা/থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড)
          ৭) সদস্যদের (রুকনদের) ব্যক্তিগত রিপোর্ট ফাইল
          ৮) সদস্য প্রার্থী (রুকন প্রার্থী) আবেদনপত্র ফাইল
          ৯) রশিদ বই-এর মুড়ি
          ১০) পরামর্শ ফাইল।
        ৯। রিপোর্ট সংরক্ষণ ১০। অফিস। (খ) প্রশিক্ষণ ১। পাঠ্যসূচি ভিত্তিক ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন। ২। প্রশিক্ষণ বৈঠক ৩। সামষ্টিক পাঠ। ৪। পাঠচক্রঃ পাঠচক্রের অধিবেশন মাসে কমপক্ষে ১টি হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রতি অধিবেশন ২ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হবে না। পাঠচক্রকে ফলপ্রসূ করতে হলে নিম্নোক্ত দিকগুলোর উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকারঃ র) পাঠচক্রেরর সদস্যগণ সমমানের হবে। রর) পরিচালককে অবশ্যই অভিজ্ঞ ও যোগ্য হতে হবে। ররর) পরিচালক পড়াশুনা ও চিন্তাভাবনার জন্য প্রথম অধিবেশনেই প্রয়োজনীয় গাইড লাইন দেবেন। রা) সকল সদস্যই বিষয়বস্তুর উপর পড়াশুনা করে আসবেন এবং আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় নোট সাথে রাখবেন। া) অধিবেশনে সকল সদস্যকে উপস্থিত থাকতে হবে। ার) যথাসময়ে উপস্থিত হতে হবে। ারর) যথাযথ মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। পূর্ণ আন্তরিকতা ও একাগ্রতা নিয়ে আলোচনায় অংশ নিতে হবে। াররর) পরিচালক আলোচনাকে একটি নির্দিষ্ট খাতে প্রবাহিত করবেন এবং প্রতিটি পয়েন্টের উপসংহার পেশ করবেন। রী) প্রতিটি পয়েন্টের মূল কথাগুলোকে সকলে নোট করবেন। ৫। আলোচনা চক্র। ৬। শিক্ষা বৈঠক। ৭। শিক্ষা শিবির। ৮। গণশিক্ষা বৈঠক। ৯। গণ নৈশ ইবাদত ১০। ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ। ১১। মুহাসাবা। ১২। বক্তৃতা অনুশীলন। ১৩। দোয়া, যিকর ও নফল ইবাদত। ১৪। সামষ্টিক খাওয়া। ১৫। আত্মসমালোচনা। তৃতীয় দফা কর্মসূচি ঃ সমাজ সংস্কার ও সমাজ সেবা গঠনতন্ত্রের ভাষায় জামায়াতের তৃতীয় দফা কর্মসূচি হলো ঃ “ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে সামাজিক সংশোধন, নৈতিক পুনর্গঠন ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সাধন ও দুস্থ মানবতার সেবা করা।” কেবলমাত্র কয়েকটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন বা কিছু দাওয়াতী ও সাংগঠনিক কাজ করলেই পুরাপুরি ইসলাম গ্রহণ এবং মুসলিম হিসেবে দায়িত্ব পালনের কাজ সম্পূর্ণ হয় না। সাথে সাথে সামাজিক সংস্কার ও সমাজ সেবামূলক প্রয়োজনীয় কিছু কাজেও হাত দেয়া দরকার। এর আলোকে এ দফায় তিনটি প্রধান কাজ রয়েছে ঃ ক) সমাজ সংশোধন ও সমাজ সংস্কার খ) অপসংস্কৃতি রোধ ও ইসলামী সংস্কৃৃতির বিকাশ গ) দুস্থ মানবতার সেবার লক্ষ্যে সমাজ সেবা ক) সমাজ সংশোধন ও সমাজ সংস্কার ১। প্রচলিত কুসংস্কার সম্পর্কে সতর্কীকরণ। ২। ইসলামী আচার অনুষ্ঠান চালুকরণ। ৩। পেশাভিত্তিক কাজ। ৪। গণশিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন। ৫। মসজিদ সংস্কারঃ এতে ২টি সমস্যা প্রধানত দেখা যায়, যেমন- ক) অব্যবস্থাপনা ও খ) অযোগ্য ও দুর্বল লোকদের পরিচালনা। ৬। হাট-বাজার সংস্কার। ৭। পাঠাগার প্রতিষ্ঠা। ৮। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণ। ৯। ক্লাব, সমিতি স্থাপন ও পরিচালনা। ১০। সমাজবিরেধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। খ) অপসংস্কৃতি রোধ ও ইসলামী সংস্কৃৃতির বিকাশ এ দফায় ২টি কাজ— ক) অপসংস্কৃতি রোধ ও খ) ইসলামী সংস্কৃৃতির বিকাশঃ ইসলামী সংস্কৃৃতি বিকাশের মাধ্যম- ১) পত্র-পত্রিকা প্রকাশ; ২) ইসলামী গান রচনা ও প্রচলন; ৩) কিরাআত, ইসলামী গানের রেকর্ড; ৪) প্রদর্শনী; ৫) জ্ঞান চর্চার অভ্যাস। গ) দুস্থ মানবতার সেবার লক্ষ্যে সমাজ সেবা ১) দাতব্য চিকিৎসালয়; ২) রোগীর পরিচর্যা; ৩) পরিচ্ছন্নতা অভিযান; ৪) রাস্তাঘাট মেরামত; ৫) অফিস আদালতে কাজের সহযোগিতা; ৬) প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আকস্মিক দুর্ঘটনায় জনগণের পাশে দাড়ানো; ৭) দুর্দশাগ্রস্ত, বিত্তহীন ও ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা; ৮) গরীব ছাত্রদের সহযোগিতা দান; ৯) বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান; ১০) কর্জে হাসানা; ১১) ভ্রাম্যমান দাতব্য চিকিৎসালয়; ১২) বিয়ে-সাদী; ১৩) পত্র-পত্রিকায় লেখা প্রেরণ; ১৪) মাইয়েতের কাফন-দাফন ও জানাযায় অংশগ্রহণ; ১৫) প্রতিষ্ঠিত সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাসমূহের সহযোগিতা গ্রহণ; ১৬) সামাজিক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সৃষ্টি। চতুর্থ দফা কর্মসূচি ঃ রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও সংশোধন গঠনতন্ত্রের ভাষায় জামায়াতের চতুর্থ দফা কর্মসূচি হলো ঃ “গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার পরিবর্তন এবং সমাজের সর্বস্তরে সৎ ও চরিত্রবান লোকের নেতৃত্ব কায়েমের চেষ্টা করা।” অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় সংস্কার বা সরকারের সংশোধনই হ‛েছ এ দফার মূল কাজ। এসব কাজের মাধ্যমেই আলাহর আইন ও সৎলোকের শাসন কায়েম হবে। নিমেড়বাক্ত কাজগুলো এ দফার অন্তর্ভুক্ত ঃ ১। সমাজ বিশ্লেষণ। ২) রাজনৈতিক বিশ্লেষন; ৩) বিবৃতি প্রদান; ৪) স্মারকলিপি পেশ; ৫) দাওয়াতী জনসভা; ৬) পথসভা, গণজমায়েত, মিছিল, জনসভা ও বিক্ষোভ; ৭) প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ; ৮) রাজনৈতিক যোগাযোগ; ৯) সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ ও সাংবাদিক সম্মেলন; ১০) বার লাইব্রেরীতে যোগাযোগ; ১১) ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ; ১২) পত্র-পত্রিকা প্রকাশ; ১৩) জনমত গঠন; ১৪) নির্বাচন; ১৫) রাজনৈতিক বিভাগ সৃষ্টি; ১৬) যাকাত আদায়ের অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি; ১৭) সর্বপ্রকার অর্থনৈতিক জুলুমের প্রতিবাদ ও সমাধান পেশ। তাওহিদ সংক্রান্তত্ম সূরা হাশরের শেষ রুকু মুখস্ত (১৮-২৪) یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ لۡتَنۡظُرۡ نَفۡسٌ مَّا قَدَّمَتۡ لِغَدٍ ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۸﴾ (১৮) হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেকেই চিন্তা করে দেখুক, আগামীকালের জন্য সে কী (পুণ্য কাজ) অগ্রিম পাঠিয়েছে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পুরোপুরি খবর রাখেন। وَ لَا تَكُوۡنُوۡا كَالَّذِیۡنَ نَسُوا اللّٰهَ فَاَنۡسٰهُمۡ اَنۡفُسَهُمۡ ؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ ﴿۱۹﴾ (১৯) তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, ফলে আল্লাহও তাদেরকে করেছেন আত্মভোলা (আল্লাহ কে স্মরন করার কথা মনেই আসে না) । আর তারাই হল ফাসিক। لَا یَسۡتَوِیۡۤ اَصۡحٰبُ النَّارِ وَ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ ؕ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ هُمُ الۡفَآئِزُوۡنَ ﴿۲۰﴾ (২০) জাহান্নামের অধিবাসী আর জান্নাতের অধিবাসী সমান হতে পারে না, জান্নাতের অধিবাসীরাই সফল। لَوۡ اَنۡزَلۡنَا هٰذَا الۡقُرۡاٰنَ عَلٰی جَبَلٍ لَّرَاَیۡتَهٗ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنۡ خَشۡیَۃِ اللّٰهِ ؕ وَ تِلۡكَ الۡاَمۡثَالُ نَضۡرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ یَتَفَكَّرُوۡنَ ﴿۲۱﴾ (২১) আমি যদি এ কুরআনকে পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তাহলে তুমি আল্লাহর ভয়ে তাকে বিনীত ও বিদীর্ণ (গলে গেছে) দেখতে। এ সব উদাহরণ আমি মানুষের জন্য বর্ণনা করি যাতে তারা (নিজেদের ব্যাপারে) চিন্তা-ভাবনা করে। هُوَ اللّٰهُ الَّذِیۡ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ عٰلِمُ الۡغَیۡبِ وَ الشَّهَادَۃِ ۚ هُوَ الرَّحۡمٰنُ الرَّحِیۡمُ ﴿۲۲﴾ (২২) তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, অদৃশ্য ও দৃশের জ্ঞানের অধিকারী, পরম দয়াময়, পরম দয়ালু। هُوَ اللّٰهُ الَّذِیۡ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ اَلۡمَلِكُ الۡقُدُّوۡسُ السَّلٰمُ الۡمُؤۡمِنُ الۡمُهَیۡمِنُ الۡعَزِیۡزُ الۡجَبَّارُ الۡمُتَكَبِّرُ ؕ سُبۡحٰنَ اللّٰهِ عَمَّا یُشۡرِكُوۡنَ ﴿۲۳﴾ (২৩) তিনিই আল্লাহ যিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তিনিই বাদশাহ, অতি পবিত্র, পূর্ণ শান্তিময়, নিরাপত্তা দানকারী, প্রতাপশালী, পর্যবেক্ষক, মহা পরাক্রমশালী, অপ্রতিরোধ্য, প্রকৃত গর্বের অধিকারী। তারা যাকে (তাঁর) শরীক করে তাত্থেকে তিনি পবিত্র, মহান। هُوَ اللّٰهُ الۡخَالِقُ الۡبَارِئُ الۡمُصَوِّرُ لَهُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی ؕ یُسَبِّحُ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۚ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَكِیۡمُ ﴿۲۴﴾ (২৪) তিনিই আল্লাহ সৃষ্টিকারী, উদ্ভাবনকারী, আকার আকৃতি প্রদানকারী। সমস্ত উত্তম নামের অধিকারী। আসমান ও যমীনে যা আছে সবই তাঁর গৌরব ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি প্রবল পরাক্রান্ত মহা প্রজ্ঞাবান।

        তাওহিদ সংক্রান্তত্ম ১টি হাদীস মুখস্ত (পৃষ্ঠা-৮), মাসয়ালা: নামাজ সংক্রান্তত্মঃ (পৃষ্ঠা-৮)।

        Top

# Under construction

Top

"সর্বস্বত সংরক্ষিত© ২০২৩ এস এম হোমিওপ্যাথি মেডিকেল সেন্টার; ব্লগঃ ডিজাইনে SIAAM